জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সেফ জোন’ তৈরির আহ্বান

361

ঢাকা, ২৪ মে, ২০১৮ (বাসস) : ‘সশস্ত্র সংঘাতকালে অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা বিষয়ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আহুত এক উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য প্রদানকালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সেফ জোন’ তৈরির পুনরায় আহ্বান জানালেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
আজ এখানে প্রাপ্ত স্থায়ী মিশনের এক বার্তায় একথা বলা হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘ বা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অংশীজনদের তত্ত্বাবধানে ‘সেফ জোন’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই সেফ জোন সৃষ্টি না করার কারণে বাংলাদেশে আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজভূমি রাখাইন রাজ্যে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সাথে স্থায়ী প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।’
রাষ্ট্রদূত মাসুদ আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় আমাদেরকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে সহিংস এই সশস্ত্র সংঘাতের সময় অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এমন কী জরুরি চিকিৎসা প্রদানে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টিকে সামনে রেখে ‘সশস্ত্র সংঘাতে অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা’ প্রদানের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ পাঁচ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এগুলো হল : ১) জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সশস্ত্র সংঘাতের কৌশলগত বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ ফিল্ড ম্যানেজমেন্টকে সহিংসতার অগ্রিম সতর্ক বার্তাসহ অসামরিক নাগরিকদের সম্ভাব্য হুমকির বিষয়গুলো অনুভব করার সামর্থ্যরে উন্নয়ন ঘটানো বাঞ্চনীয়।
২) মানবিক সাহায্য প্রদানকারী কর্মী এবং অসামরিক নাগরিকদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধাহীন ও নিরাপদ পথ অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংঘাতের বাইরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩) কোন দেশের পাঠানো অস্ত্র ও গোলাবারুদ যাতে অসামরিক নাগরিকদের উপর সৃষ্ট সহিংস অপরাধের কাজে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনসমূহের লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে নিশ্চিত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে তাদের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।
৪) নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা না করার যে বৈশ্বিক রীতি রয়েছে তা কার্যকর করা অত্যাবশ্যক। রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যৌন সহিংসতায় অনেক শিশুর জন্ম হয়েছে। সশস্ত্র সংঘাতে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি, কারাগারে আটক ব্যক্তি এবং যৌন সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের ভীতি মোকাবিলার বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে।
৫) আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা নিরূপন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক যাতে অসমারিক নাগরিকদের উপর সহিংস অপরাধ করেও তার দায় থেকে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ হয়।