বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি সামাজিক ব্যাধিমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

159

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বিসিএস কোর্স সমাপনী
সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি সামাজিক ব্যাধিমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’বছর বা তিন বছর মেয়াদী দারিদ্র্য বিমোচন পরিকল্পনা-যেগুলো আগের সরকার করে গেছে সেভাবে একটা দেশ কখনও উন্নত হতে পারে না। সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যেমন নিতে হবে এবং আশু করণীয় কি সেই পরিকল্পনাও গ্রহণ করে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে এবং সেজন্য তাঁর সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ ও ২০ বছর মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা সেই অনুযায়ী ২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দেই এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আমাদের গৃহীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। পাশাপাশি জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ২০০১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার যেটা বর্তমানে আমরা ২১ভাগে নামিয়ে এনেছি তাকে আরো ৪/৫ ভাগ কমিয়ে আনবো। তখন বাংলাদেশকে আমরা বলতে পারবো দরিদ্রমুক্ত। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্রের হার ১৮ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার আমেরিকা থেকে একভাগ হলেও কমিয়ে আনবো। এত বড় দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে না গেলেও দেশকে একিটি মর্যাদার আসনে নিয়ে যাওয়াই তাঁ লক্ষ্য বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পাশাপাশি ২০৭১ সাল যখন আমরা স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপন করবো এবং সেই পর্যন্ত আমাদের পরিকল্পনা থেকে যাবে যেন আগামী প্রজন্ম সেই শতবার্ষিকী ভালোভাবে উদযাপন করতে পারে।
তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিভিল প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সৈনিক এখানেই প্রস্তুত। আমি সেটাইতেই আনন্দিত। আমরা হয়তো ততদিন বাঁচবো না কিন্তু আপনারই তখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এটা আপনাদেরই দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আমি আহবান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা এসব কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষকে ভালবেসে সবাইকে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। সততাই শক্তি। আর দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ এবং দায়িত্ববোধ নিয়েই কাজ করতে হবে। কারণ এ দেশটি আমাদের এবং লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এটা অর্জন করেছি। এ স্বাধীনতাকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। তিনি বলেন, আমার নতুন প্রজন্মের কর্মকর্তা যারা, যাঁরা আমার ২০৪১’র সৈনিক তাদের জীবনটা সুন্দর ও সফল হোক এবং তাঁরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশের ডিজিটাইজেশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। যোগাযোগ খুবই সহজ হয়ে গেছে, জানা সহজ হয়েছে এবং কাজের সুযোগও অনেক বেড়ে গেছে। কাজেই আমি চাইব এই ধারাটাকে অব্যাহত রেখে আমাদের সকলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় নেদারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় গৃহীত তাঁর সরকারের শতবর্ষ মেয়াদী ডেল্টা পরিকল্পনার উল্লেখ করে বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে এবং যারা রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেবে তারাই এগুলো বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, আমরা এই কাজগুলো এমনভাবে করে যাচ্ছি যে, আমার ১৬ কোটি মানুষকে খাদ্য দিতে হবে, আবার ফসলের জমি রক্ষা করতে হবে, আবার শিল্পায়নও করতে হবে। সে জন্য দেশব্যাপী একশ’ অর্থসৈতিক অঞ্চল তাঁর সরকার গড়ে তুলছে। যেখনে বিদেশি বিনিয়োগ হবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি রপ্তানী সমৃদ্ধ হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কোন কাজ করতে গেলেই জটিলতা তার ওপর আবার মামলা। তারপরেও আমরা ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সচিব পদে ১৮০ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৫০ জন, যুগ্ম সচিব পদে ২০২৫ জন এবং উপসচিব পদে ২৬৮৬ জনকে পদোন্নতি দিতে সক্ষম হয়েছি। এর পদোন্নতি বোধ হয় কোনদিন কোন সরকার একসঙ্গে দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা সেটা দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ‘যারা নবীন কর্মচারী এবং ক’দিন পরেই কর্মস্থলে যোগদান করবেন তাদেরকে বলবো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হিসেবেই আপনারা যোগদান করবেন। দেশের মানুষের সেবা করার জন্য।’ ‘যে যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন সেখানকার কোন কাজটা করলে মানুষের জীবন মান উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে সেটা মাথায় রাখতে হবে এবং সেভাবেই পদক্ষেপ নিতে হবে, ’যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রশাসনের এক শ্রেনীর কর্মকর্তার সমালোচনা করে বলেন, দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। অথচ আমাদের দেশে দেখেছি একটা ধারণা প্রচলিত রয়েছে-কোন একটি প্রশিক্ষণ স্থলে কাউকে পদায়ন করা হলে তিনি মনে করেন তাকে ডাম্পিং স্থলে ফেলে দেয়া হলো। আমি জানি না কেন এই মানসিকতা। অথচ সবথেকে যারা মেধাবী তাদেরকেই এসব প্রশিক্ষণ স্থলে নিয়োগ দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের আগামী দিনে কারিগরগুলো তারা তৈরি করবে সেইভাবে উপযুক্ত হয়ে।
সেই জন্যই প্রশিক্ষণ একাডেমি উন্নত করা এবং প্রশিক্ষণের আরো সুযোগ সৃষ্টির দিকে তাঁর সরকার দৃষ্টি দিচ্ছ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে যেন দেশটাকে আমরা সেইভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
তৃণমূল থেকেই তাঁর সরকার দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই প্রচেষ্টার ফলেই দেশে আয় বৈষম্য হ্রাস পেযেছে। এখন গ্রামের মানুষও অনেক উন্নত জীবন পাচ্ছে এবং সেটাকে আরো উন্নত এবং স্থায়ী রূপ দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি এ সময় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সকলের প্রতি দাবি জানান, যদি এতটুকু ভালোকাজ কারো জন্য করে থাকি তাহলে আমি এইটুকু চাই আমাদের বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে এবং দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, সুন্দর থাকে।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬৫০/কেএমকে