বাজিস-১ : পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার একজন আবেদ আলী

195

বাজিস-১
জয়পুরহাট-আবেদ আলী
পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার একজন আবেদ আলী
॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী নির্মম নির্যাতন চালিয়ে গলায় চাইনিজ কুড়ালের কোপ মেরে নিজের করা গর্তে যাকে ফেলে দিয়েছিল সেই টগবগে যুবক এখন বৃদ্ধ আবেদ আলী (৭০)। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়েও সেদিনের স্মৃতি মনে হলে আজও তিনি আতঁকে ওঠেন মনের অজান্তে।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো জয়পুরহাটেও চলে হত্যাযজ্ঞ। আর এ জন্য পাক সেনারা বেছে নেয় জয়পুরহাটের সীমান্ত সংলগ্ন পাগলাদেওয়ান, ইছুয়া, নওপাড়া, চিরলা গ্রাম। পাগলাদেওয়ানে একটি কংক্রিট বাংকার নির্মাণ করে পাক সেনারা। যা আজও ওই এলাকার মানুষের কাছে নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের (বাংলা ৭ আষাঢ়) দিনটি ছিল শুক্রবার। জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য যখন মুসল্লিরা মসজিদে সমবেত ঠিক তখনই পাক হানাদার বাহিনীর সদস্য ৩০/৩২ জনকে ধরে নিয়ে যায় পাগদেওয়ান ও চিরলা মসজিদ থেকে। আক্রোশের কারণ ছিল কয়েকদিন পূর্বে পল্লীবালা-পাগলাদেওয়ান রাস্তায় নিজেদের পুঁতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে ৪ পাক সেনা নিহত হয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে পাক সেনারা অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে ওই এলাকার মানুষের ওপর। মসজিদ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৩০/৩২ জনের মধ্যে ছিলেন সে দিনের ২৩ বছরের টগবগে যুবক চিরলা গ্রামের আবেদ আলী। প্রথমে দু’হাত পেছনে বেঁধে বাংকারে রাখা হয় তাকে। পরে পাশের সাহেব আলী নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাত-পা বাঁধা আরো ৩৫/৪০ জন মানুষ ছিল। এক সঙ্গে লাইন করে গুলি করার প্রস্তুতি শেষ হতেই খবর আসে বাংকারে ফিরে নেয়ার জন্য। বাংকারের পাশের বাড়িতে রেখে একটু দূরে কয়েক জনকে দিয়ে একটি গর্ত তৈরি করে নেয় পাক সেনারা। এরপর দু’জন করে হাত বেঁধে নির্যাতন করতে করতে গর্তের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে মাথায় কোপ দেয় আর পা দিয়ে ঠেলে গর্তে ফেলা হয় লাশগুলো । অন্যদের মতো একই ভাগ্য বরণ করতে হয় আবেদ আলীকে। তাকেও কোপ দিয়ে ফেলে দেয়া হয় গর্তে। একটু একটু বৃষ্টি হচ্ছে , অনেক রাতে জ্ঞান ফিরে দেখেন গর্তে পড়ে আছেন। শরীর রক্তে মাখা। না খাওয়া শরীরে দুর্বল হয়ে পড়া আবেদ আলী ধীরে ধীরে সেখান থেকে উঠে পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখান থেকে পরের দিন বালুরঘাট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গলায় কোপ মারার সেই চিহ্ন আজও রয়েছে। সে দিনের কথা মনে হলে অজান্তে আঁতকে ওঠেন তিনি। আবেদ আলী ক্ষোভ নিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭১ সালে নির্যাতনের শিকার হওয়া লোকজনের জন্য অনেক কিছু সহযোগিতা করছেন শুনেছি আমার ভাগ্যে কিছুই জোটেনি আজও। স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস আসলে সাংবাদিকরা আসেন শুধু সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য। এ ছাড়া কেউ খোঁজ রাখেনা।
বাসস/সংবাদদাতা/রশিদ/১০০০/নূসী