বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২ : সচেতনতায় কমছে কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি

347

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২
গার্মেন্টস-যৌন হয়রানি
সচেতনতায় কমছে কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি
ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : সাভারের এক জুতার কারখানায় কাজ নেয় একুশ বছর বয়সী রুমা আক্তার। মূলত সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মারা যাওয়ার পর পাঁচ সদস্যের পরিবারে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। তাই পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে পড়ালেখার ইতি টেনে হাল ধরতে হয় সংসারের। কাজ শুরুর দুই মাসের মাথায় তার সেকশনের ম্যানেজার বারবার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নাম করে রুমাকে রুমে ডেকে নিয়ে যেত। প্রথম প্রথম ভালো আচরণ করলেও পরে নানা ধরনের প্রস্তাব দিতে থাকে ম্যানেজার। প্রথম কয়েকদিন মুখ বুঁজে সহ্য করলেও এক সময় প্রতিবাদ করে বসেন রুমা। সরাসরি ফ্লোর লিডারকে জানায় ঘটনা। ফ্লোর লিডার জানায় কারখানার জেনারেল ম্যানেজারকে। দু’দিনের আল্টিমেটাম দেন তিনি। দু’দিনের মধ্যে যদি ব্যবস্থা না নেয় তবে কাজ বন্ধ করে রাস্তায় অবরোধের পাশাপাশি আদালতে মামলা করারও হুমকি দেন ফ্লোর লিডার তাহমিনা হক।
অবস্থা বেগতিক দেখে পরদিনই কারখানার পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে চাকরি হারায় ওই ম্যানেজার।
তবে দেশের সব কারখানার সকল নারী কর্মীরা রুমার মত অত সাহসী নয়। মুখ বুঁজে সহ্য করেন পুরুষ সহকর্মীদের নির্যাতন। অনেকে আবার সহ্য করতে না পেরে চাকরিও ছেড়ে দেন।
সুমাইয়া তাদের মতই একজন নারী। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। কাজ শুরু করার এক বছর পর তার সেকশনের ম্যানেজার হিসেবে নতুন চাকরিতে যোগ দেন এক পুরুষ। নাম মো. জুবায়ের। একমাসের মাথায় নজর পড়ে সুমাইয়ার উপর। এরপর থেকেই স্বামী পরিত্যাক্তা সুমাইয়াকে নানা ইঙ্গিত দিতে থাকে জুবায়ের। কাজে-অকাজে রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। প্রথম প্রথম বুঝতে না পারলেও পরে কৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকেন সুমাইয়া। কিন্তু তারপরও পিছু ছাড়েনি জুবায়ের।
সুমাইয়া বলেন, অনেকবার ভেবেছি চাকরি ছেড়ে দিব। আর তখনই আমার দুই সন্তানের মুখ ভেসে উঠে চোখে। এই কারখানায় বেতন একটু বেশি আর নিয়মিত তা পাওয়া যায়। ফলে চাকরিও ছাড়তে পারছি না। তাই মুখ বুজে এখানে পড়ে আছি।
শ্রমিক নেতা সোহেলুর রহমান বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি করার নির্দেশনা রয়েছে আদালতের। কিন্তু অনেক কারখানা তা মানছে না। আবার মালিক পক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। তাই অধিকাংশ কারখানায় নারী নির্যাতন নিয়মিত ঘটনা ছিল একসময়। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে।
এখন অনেক নারী শ্রমিক নিজেরাই প্রতিবাদ করেন। তাদের প্রতিবাদের কারণে অনেক পুরুষ কর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে বর্তমান সময়ে। যা আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে ভাবাই যেত না।
কর্মজীবী নারী’র করা ‘এস্টেট অব রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশন অব উইম্যান রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়াকার্স’ শীর্ষক এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানাগুলোতে শতকরা ১৩ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বলেন, কারখানাগুলো যদি আদালতের দেওয়া গাইডলাইন মেনে চলত তবে যৌন হয়রানী অনেকাংশে কমে যেত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অনেক কারখানা এই গাইডলাইন মেনে চলে না। আবার অনেকে এ বিষয়ে কিছু জানেও না। তিনি আদালতের এই গাইডলাইন মেনে চলার জন্য এবং এ বিষয়ে কারখানার মালিকদের জানানোর জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির করার দাবী জানান। এই কমিটি সম্পূর্ণ বিষয়টি মনিটর করবে। যদি কোন কারখানা এই গাইডলাইন না মানে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবী জানান এডভোকেট মনোয়ারা।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/০৯১৫/আহো/এসএইচ