নির্বাচনে সবার প্রতি সমভাবে আইনের প্রয়োগ করুন : মাহবুব তালুকদার

376

ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার প্রতি সমভাবে আইনের প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার আকাঙ্খা ছিল একটি গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্রের মূলকথা আইনের শাসন ও সবার প্রতি সমভাবে আইনের প্রয়োগ। শুদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে সেই স্বপ্নটিকে বাস্তবতায় রূপদান করে আসুন আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।’
আজ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের এক প্রশিক্ষণ (প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ) কর্মসূচিতে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা। এই পূর্বশর্ত পালনে আইনানুগভাবে কর্তব্য পালনে আপনারা দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আইন যদি নিজস্ব গতিতে না চলে তাহলে কোনো কার্যক্রমই আইনানুগ হতে পারে না। সবার জন্য সমভাবে আইনের প্রয়োগ করা না হলে সেই আইন, আইন নয়, আইনের অপলাপ মাত্র। তাই আইনসিদ্ধ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে কমিশন নিজেদের কলঙ্কিত করতে চায় না। আমি জানি আপনাদের কেউই এর ভাগিদার হতে চাইবেন না।’
নির্বাচন কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, নির্ভয়ে, সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্বপালন করবেন। আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে। অন্যদিকে আপনাদের সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে সমগ্র জাতি।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, সবমিলিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ভোটকেন্দ্রের সব অনিয়ম রোধ, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা এই কর্মকর্তাদের দেয়া হয়েছে। যা কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা সামরিক কর্মকর্তার থেকে কম নয়। সুতরাং, কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো শিথিলতা কখনোই বরদাশত করা হবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকের মতো আপনাদের সম্মুখ সমরে সাফল্যের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ২৬ দিন বাকি। নির্বাচনের মূল দায়িত্বপালন করেন প্রিজাইডিং অফিসার। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার থাকেন। সার্বিক বিবেচনায় তিনিই সঞ্চালক।
মাহবুব তালুকদার ‘আপনারা দায়িত্ববোধ ও নির্বাচন সম্পর্কে জনমনে আস্থার ক্ষেত্র তৈরি করবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থী আপনাদের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। আপনাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অতিসামান্য। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাতে ইচ্ছামতো পছন্দের প্রার্থীকে ভোটটি দিতে পারেন। এই সামান্য চাওয়াই এখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাস্তবতায় বিশাল কর্মযজ্ঞে রূপান্তরিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি। আপনারা আমাদের শপথ গ্রহণের মূল অংশীদার। আপনাদের মাধ্যমেই আমরা নির্বাচন সম্পন্ন করি। এক্ষেত্রে আমাদের শপথ আপনাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং আপনাদের দায়িত্ব পালনের উপর বর্তায়। আপনারাও মনে মনে শপথগ্রহণ করুন দেশ ও জাতির স্বার্থে নির্বাচনের এই দায়িত্ব পালনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় রচনা করবে। সেই সোনালি অধ্যায়ের রূপকার এই নির্বাচন কর্মকর্তরা। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আমরা শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর নজরদারির সামনে। আমাদের কার্যকলাপ, প্রতিটি পদক্ষেপ সবাই প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সেদিক থেকে এই নির্বাচন আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচনের কোনো ধারাবাহিকতা নেই। কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, কখনো সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে, কখনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছি।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের ১৩টি জেলার ৪০৮ জন প্রশিক্ষকদের আজ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।