বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় নীতিমালা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

173

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-প্রতিবন্ধী দিবস
সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় নীতিমালা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

ভাষণের শুরুতেই বিজয়ের মাসের এই দিনটিতে জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগ সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করার পর পরই আমাদের একটা সংবিধান দিয়েছিলেন। সে সংবিধানে তিনি দেশের সর্বস্তরের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে গেছেন। এমনকি প্রতিবন্ধীদের কথা এবং অনগ্রসর জাতির কথাও সেখানে বলা আছে।
তিনি বলেন, কাজেই আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই চেষ্টা করেছে এদের ভাগ্যের কিভাবে উন্নয়ন করা যায়। আর তাদের ভেতর যে মেধা রয়েছে, যে শক্তি রয়েছে তাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে বড় কথা আমাদের সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে প্রতিবন্ধীদের চলাফেরা ও অধিকারটা যেন প্রতিষ্ঠিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং কাজ করে যাচ্ছি।
সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৬ লাখের উপরে প্রতিবন্ধী রয়েছে তাদেরকে যেমন ভাতা দেয়া হচ্ছে তেমনি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রাথমিক স্তরে ৭শ’ টাকা করে, মাধ্যমিক স্তরে ৭৫০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৮৫০ টাকা এবং তাঁর থেকে উচ্চস্তরে যারা পড়াশোনা করছেন তাদেরকে এক হাজার ২শ’ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এই সময় প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রায় দুই কোটি চার লাখ শিক্ষার্থী এই বৃত্তি এবং উপবৃত্তি পাচ্ছে।
বিনা পয়সায় পাঠ্যপুস্তক এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই প্রদানে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জুলাই মাস থেকেই প্রতিবন্ধীদের ভাতা এবং সরকার প্রদত্ত অন্যান্য ভাতাসমূহ ব্যাংকে প্রাপকের নিজস্ব একাউন্টের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের সহায়তায় ‘জিটুপি’ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী অধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে এবং এর অপশনাল প্রটোকল অনুস্বাক্ষর করেছে। এর ফলে অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং সব ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতার কারণে কোন শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা যাবে না’-এ লক্ষ্যে আমরা একটি বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালার আওতায় ৬২টি বিদ্যালয়ে প্রায় ৮ হাজার বুদ্ধি প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে।
সরকার এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের শতকরা ১০০ ভাগ বেতন ভাতা সহায়তা প্রদান করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতিবন্ধীরা যেন তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে সেই প্রশিক্ষণও আমরা দিচ্ছি এবং প্রতিবন্ধীদের যারা প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন তারা যেন আরো যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ পান সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করছি।
সেইসাথে মোবাইল ভ্যানের সাহায্যে দেশজুড়ে প্রতিবন্ধিতা এবং অটিজম সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও চালু রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবারে হতদরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুটিও যেন বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা পায় তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমেও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি আমাদের কোন শ্রেণীর মানুষই অবহেলিত থাকবে না। সকলকেই মনে করতে হবে তারা আমাদেরই আপনজন। প্রতিবন্ধীদের আপন করে নেওয়ার মানসিকতা যেন সকলের মাঝে গড়ে ওঠে, সেটাই আমি চাই।
তিনি এক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদেরকেও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতায় বিভিন্নমুখী অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। বক্তৃতা পর্ব শেষে তিনি প্রতিবন্ধীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৪১০/জুনা