মেহেরপুরে কলাইয়ের রুটি বিক্রির ধুম

266

॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : শীত উপেক্ষা করে মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষকে কলাইয়ের রুটি খেতে দেখা যাচ্ছে।
সুস্বাদু-তাই মেহেরপুর অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় কলাইয়ের রুটি। শীত মৌসুমে এ জেলার গাংনী, বামুন্দি, মুজিবনগর,কেদারগঞ্জ বাজারে ছাড়াও গ্রামের অনেক হাট বাজারে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কলাইয়ের রুটি বিক্রির ধুম পড়ে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। জেলা শহরের রাস্তার পাশে, বিভিন্ন হাট-বাজারে চলছে এ রুটি বিক্রির ধুম। মুখরোচকের সাথে পুষ্টিকর কলাইয়ের রুটি বিক্রি করে শীতকালটা অনেকের জীবীকা হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষ করে এই অঞ্চলে কলাই রুটি বিক্রি করে অনেক নারীর জীবন-জীবিকার জন্য নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে। তারা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রুটি বিক্রি করেন।
ব্যবসায়ী জুবিলি খাতুন জানান, কলাই রুটি খেতে সবজি লাগে না। চিনি, গুড়, কিংবা মিষ্টিও লাগে না। প্রয়োজন হয় না গোশতেরও। শুধুমাত্র তেল, লবণ ও মরিচ, রসুন, ধনেপাতা আর পিয়াজ দিয়ে তৈরি এ রুটি ঝালবাটা দিয়ে খেতে হয়। রুটি ব্যবসায়ীর থালা বাসনেরও দরকার হয় না। ক্রেতারা রুটি হাতের উপর নিয়ে খেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। প্রতি রাতে একেক জনের দুই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়। লাভ ও হয় ছয় সাতশ টাকা।
রাস্তার পাশে ফুটপাতে সামান্য বেঞ্চ আর প্লাস্টিক টুলের ওপর কিংবা কাঠের পিড়িতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে বসে রুটি বিক্রি করে চলেছেন।
কলাইয়ের রুটি বিক্রেতা জিয়ারুল জানান, ভদ্রলোকদেরও কম পছন্দ নয় কলাইয়ের রুটি। তবে তারা তো ফুটপাতে এসে বসতে পারে না। কাজের লোকের মাধ্যমে কিনে নেন।
কালাইয়েল রুটি বানানোর কৌশল হিসেবে দেখা যায়- চাল ও গমের আটা মেশানো আটা পরিমাণ মতো লবণ ও পানি দিয়ে আটা মাখিয়ে তৈরি করা হয় আসল কাজ। মাখানো কাজটি যত ভালো হবে রুটি হবে তত ভালো ও সুস্বাদু। জুবিলি বেগমের ভাষায়- শুধু কলাইয়ের রুটি খেতে ভালো লাগে না। তিতকুটে ও কষ্টা লাগে। তাই চাল, গম ও ভুট্টার আটা মিশিয়ে দিতে হয় ।
দেখা যায়- কলাইয়ের রুটি আয়তনে বড় বড় এবং বেশ পুরো। পানি মাখানা আটা গোল করে একটি পলিথিনের ওপর রেখে আরেকটি পলিথিন দিয়ে হাতের চাপে বৃত্তাকার করে চুলারে তাওয়াতে সেঁকে সেঁকে রুটি তৈরী করা হচ্ছে। রুটি সেকার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পযন্ত রুটি জমজমাট বিক্রি হয়। একেকটি রুটি কুড়ি টাকা। স্পেশালভাবে সেঁকে নিলে ২৫ টাকা করে প্রতিটি।
জেলা খামার বাড়ির উপ পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান জানান- কলাইয়ের রুটি পুষ্টিমান সুস্বাদু একটি খাবার। জাতি ধর্ম সকলের কাছেই কলাইয়ের রুটি প্রিয় খাবার। সবজিসহ বিভিন্ন লাভজনক চাষের কারণে এই কলাই হারিয়ে যাচ্ছে।