বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : লাইলির স্বপ্নের বুটিকস

206

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
লাইলি-বুটিকস
লাইলির স্বপ্নের বুটিকস
॥ আবিদা হক লোরা ॥
ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : লাইলি আক্তার ফাতেমা (৩৮) মধ্যবিত্ত ঘরের অতি সাধারণ একজন গৃহিণী। স্বামী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার। স্বামী থাকেন কুয়েতে। স্বামী খুব বেশি টাকা-পয়সা পাঠাতে পারেন না। স্বল্প আয়ে এক রকম টানাপোড়নের মধ্যেই চলছিল তাদের সংসার। তিনি বলেন, ‘শহরে থাকি। বাচ্চারা স্কুলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই আর দশটা বাচ্চা যেভাবে চলে, আমার বাচ্চারাও সেভাবে চলতে চাইবে। আমার স্বামীর একার আয়ে সবার সব চাহিদা পূরণ করে সবার সঙ্গে মানিয়ে চলাটা খুব কষ্টকর।’ সব মিলিয়ে শহরের যান্ত্রিক জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে তার মধ্যেও দানা বেঁধে ওঠে বিচিত্র স্বপ্নের। সেখানে হাতছানি দেয় অনিন্দ্য চাহিদার প্রতিচ্ছবি। পাড়া-প্রতিবেশীদের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তিনিও খুঁজে ফেরেন আরও একটু স্বচ্ছ্বল জীবনের ঠিকানা। চারপাশে মেয়েদের জীবন-জীবিকার ব্যস্ততা দেখে তিনি নিজেকে তৈরি করেন কিছু একটা করার অদম্য বাসনা নিয়ে।
বাংলাদেশে স্বল্প পুঁজির ব্যবসা জগতের একটি প্রচলিত শব্দ বুটিকস। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক নারী এই ব্যবসাকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন। লাইলি তাদের মধ্যে একজন। বুটিকসের মাধ্যমে নিজের উদ্যমকে শাণিত করতে করতে হাঁটি-হাঁটি পা-পা’র মতই শুরু করেন কাছের পরিচিত জনদের কাছ থেকে এক প্রকার ধারেই কাপড় এনে ঘরোয়া ব্যবসা। বেশ ক’দিন এভাবে করতে করতে বেশ সাড়া পাওয়ায় অভাবনীয়ভাবে উৎসাহিত হয়ে ঘরোয়া গন্ডির বাইরে পা বাড়ালেন তিনি। পা বাড়িয়ে প্রথমে তিনি যে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন সেটি হল পুঁজির অভাব। তিনি বলেন ‘এক রকম মুষড়েই পড়েছিলাম আমি। একজন স্ত্রীর সব চাইতে ভরসার জায়গা হচ্ছে তার স্বামী। কিন্তু তার কাছ থেকে নিরুৎসাহিত হলাম তার সীমিত সামর্থ্যরে জন্য। মা-বাবা এবং শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের থেকেও কোন সাহায্য পাইনি।’ কিন্তু নিজের ভাই-বোনের তার উপর আস্থা ছিল।
বোনের দেয়া বিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটু বড় পরিসরে তিনি বুটিকস-এর যাত্রা শুরু করেন। তিন মাস ধরে করা ঘরোয়া ব্যবসা থেকে ভাল সাড়া পেয়েই মূলত তিনি শো-রুম দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কাঁঠালবাগান এলাকাটি বাজারের কাছে এবং ঘনবসতি হওয়ায় তিনি সেখানেই ছোট একটি শো-রুম দেন। তার ব্যবসায়ে তার ভাই তাকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন। এখন ব্যবসার জন্য কাপড় আনা শুরু করেন নরসিংদী থেকে। তার একার পক্ষে নরসিংদী এবং বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তার ব্যবসায়ের নানা পণ্য আনা সম্ভব হয় না। মাঝে মাঝে তার ভাই এই কাজগুলো করে তাকে সহায়তা করেন।
তিনি তার বুটিকসের কাপড়ের পাশাপাশি মেয়েদের নানা ধরনের প্রসাধনী যেমন কানের দুল, জুতা ইত্যাদি বিক্রি করেন। ব্যবসা এবং সংসার দুটিই সুন্দরভাবে সামলাচ্ছেন তিনি। তার দোকানটা মূলত জম-জমাট হয়ে ওঠে বিকেল থেকে। তাই সংসার আর ব্যবসার সময় সামঞ্জস্য করে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না তার। পাশাপাশি ইদানীং স্বল্প বেতন দিয়ে একজন কর্মচারী রেখেছেন তিনি।
তার এই নতুন শো-রুমের বয়স ছয় মাস। তিনি এই ব্যবসা করার জন্যে তার পরিবার থেকে কোন সহায়তা না পেলেও তার এলাকার মানুষ এবং পাড়া-প্রতিবেশী তাকে অনেক সহায়তা করছেন। তিনি ভেবেছিলেন যে বাজারের এলাকা হওয়াতে একজন নারী হিসেবে বাজারের এলাকায় নিজের দোকান নিয়ে বসলে তার বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু বাজারের মানুষ তাকে বাধা দেয়ার পরিবর্তে এই উদ্যোগ নেয়ার জন্য শুভকামনা দিচ্ছেন। তার মতে ‘আল্লাহর রহমতে এই এলাকায় একজন নারী হিসেবে কোন প্রতিকূলতার মধ্যে পরতে হয়নি আমার। বেশ ভালোভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। লাভও হচ্ছে ভালোই। ব্যবসা থেকে যা আয় হয় তা থেকে দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও আমার সংসারে কিছু অংশ নির্বাহ করে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/আহলো/স্বব/১২০০/আহো/-এসএইচ