প্রথম ইনিংসে লিড পেয়েও দিন শেষে চিন্তায় বাংলাদেশ

274

চট্টগ্রাম, ২৩ নভেম্বর ২০১৮ (বাসস) : চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানে অলআউট করে দেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ৭৮ রানের লিড পায় টাইগাররা। কিন্তু দ্বিতীয় দিন শেষে চিন্তার ভাঁজ বাংলাদেশের কপালে রেখা টেনেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ৫৫ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছে টাইগাররা। দিন শেষে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩৩ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ।
মোমিনুল হকের সেঞ্চুরির পর টেল-এন্ডারদের দৃঢ়তায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন তিন শতাধিক রানের কোটা স্পর্শ করতে সক্ষম হয় টাইগাররা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে প্রথম দিন শেষে এ ৮৮ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৫ করে বাংলাদেশ।
মোমিনুল হকের সেঞ্চুরির পরও দিনের শেষদিকে এসে বিপদে পড়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। ১৩ রানের ব্যবধানে মিডল-অর্ডারে সেরা চার ব্যাটসম্যানকে হারায় টাইগাররা। ফলে ভালোভাবে দিন শেষ করার স্বপ্নে ভাটা পড়ে। কিন্তু নবম উইকেটে ৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশের রান দিন শেষে তিন শতাধিক অতিক্রম করেন দুই টেল-এন্ডার নাইম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। নাইমের ২৪ ও তাইজুলের ৩২ রানের সুবাদে ৮ উইকেটে ৩১৫ রানের সংগ্রহ নিয়ে প্রথম দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় দিন সকালে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ২৮ বল টিকে তারা। ২৬ রানে থেমে যান নাইম। ৩ বল মোকাবেলা করে শুন্য হাতে আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমান। দু’টি উইকেটই নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোমেল ওয়ারিকান। ফলে ইনিংসে শ্যানন গাব্রিয়েলের সমান ৪টি করে উইকেট নেন ওয়ারিকান। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৩২৪ রানে।
এরপর নিজেদের ইনিংস শুরু করে বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্কোর বোর্ডে ৩১ রান যোগ হতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। ওপেনার ও অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট ১৩ ও শাই হোপ ১ রান করে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের শিকার হন। আরেক ওপেনার ১৪ রান করা কাইরেন পাওয়েলকে বিদায় দেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন সুনিল অ্যামব্রিস ও রোস্টন চেজ। বড় জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন তারা। কিন্তু তাদের বেশি দূর যেতে দেননি অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ডান-হাতি অফ-স্পিনার নাইম হাসান। বল হাতে আক্রমনে এসে নিজের তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে অ্যামব্রিস ও চেজকে শিকার করেন তিনি। অ্যামব্রিস ১৯ ও চেজ ৩১ রান করেন। ফলে ৮৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন হার্ড-হিটার শিমরোন হেটমায়ার। টি-২০ মেজাজে খেলতে থাকেন তিনি। ফলে লাইন-লেন্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ বোলারদের পরিকল্পনা। এই সুযোগ ৪৩ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ–সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হেটমায়ার। অর্ধশতকের পরও নিজের মারমুখী মেজাজ ধরে রেখেছিলেন তিনি। নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন হেটমায়ার। কিন্তু ব্যক্তিগত ৬৩ রানে থেমে যেতে হয় তাকে। বাংলাদেশের ডান-হাতি অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন হেটমায়ার। ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৭ বলে ৬৩ রান করেন তিনি ।
দলীয় ১৮০ রানে হেটমায়ারের বিদায়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন টেল-এন্ডার ্ব্যাটসম্যানকে বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে দেননি বাংলাদেশের নাইম। দেবেন্দ্র বিশু ৭, কেমার রোচ ২ ও ওয়ারিকান ১২ রান করে নাইমের শিকার হন। ফলে নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই পাঁচ উইকেট শিকার করে নেন নাইম। বাংলাদেশের অষ্টম বোলার হিসেবে অভিষেক টেস্টে পাঁচ উইকেট নিলেন নাইম।
নাইমের কীর্তির মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশা-ভরসার প্রতীক হিসেবে ক্রিজে টিকে ছিলেন ডাউরিচ। দলের রানে চাকা ঘুড়াচ্ছিলেন তিনিই। তবে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ রানে থাকা গাব্রিয়েলকে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানে আটকে দেন বাংলাদেশের সাকিব। শেষ পর্যন্ত ৬৩ রানেই অপরাজিত থাকেন ডাউরিচ। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০১ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি । বাংলাদেশের নাইম হাসান ৬১ রানে ৫টি ও সাকিব আল হাসান ৪৩ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম ১টি করে উইকেট নেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানে অলআউট করে দিয়ে প্রথম ইনিংস থেকে ৭৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। সেই লিডকে সাথে নিয়ে দিনের শেষ সেশনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে টাইগাররা। ব্যাট হাতে নেমেই মহাবিপদে পড়ে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনারদের তোপে দিশেহারা হয়ে পড়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইন-আপ। ১৩ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরেন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস সৌম্য সরকার। ইমরুল ২ ও সৌম্য ১১ রান করেন।
দুই ওপেনারের মত ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছেন পরের দিকের তিন ব্যাটসম্যানও। এরপর দলীয় ৩২ রানে মোমিনুল হক, ৩৫ রানে সাকিব ও ৫৩ রানে মোহাম্মদ মিথুন আউট হলে ফলে মহা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই চাপকে দিন শেষে আরও বাড়তে দেননি মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। মুশফিক ১১ ও মিরাজ শুন্য রানে অপরাজিত আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ারিকান-চেজ ২টি করে ও বিশু ১টি উইকেট নেন।

 

স্কোর কার্ড :

বাংলাদেশ ইনিংস (প্রথম দিন ৩১৫/৮, ৮৮ ওভার, নাইম হাসান ২৪*, তাইজুল ইসলাম ৩২*) :

ইমরুল কায়েস ক অ্যামব্রিস ব ওয়ারিকান        ৪৪

সৌম্য সরকার ক ডাউরিচ ব রোচ                  ০

মোমিনুল হক ক ডাউরিচ ব গাব্রিয়েল                ১২০

মোহাম্মদ মিথুন ক ডাউরিচ ব বিশু                 ২০

সাকিব আল হাসান বোল্ড ব গাব্রিয়েল              ৩৪

মুশফিকুর রহিম এলবিডব্লু ব গাব্রিয়েল              ৪

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব গ্যাব্রিয়েল               ৩

মেহেদি হাসান মিরাজ বোল্ড ব ওয়ারিকান        ২২

নাইম হাসান ক হোপ ব ওয়ারিকান                ২৬

তাইজুল ইসলাম অপরাজিত                        ৩৯

মুস্তাফিজুর রহমান এলবিডব্লু ব ওয়ারিকান        ০

অতিরিক্ত (বা-৩, লে বা-৫, নো-৪)               ১২

মোট (অলআউট, ৯২.৪ ওভার)                   ৩২৪

উইকেট পতন : ১/১ (সৌম্য), ২/১০৫ (ইমরুল), ৩/১৫৩ (মিথুন), ৪/২২২ (মোমিনুল), ৫/২২৬ (মুশফিক), ৬/২৩০ (মাহমুদুল্লাহ), ৭/২৩৫ (সাকিব), ৮/২৫৯ (মিরাজ), ৯/৩২৪ (নাইম), ১০/৩২৪ (মুস্তাফিজ)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :

কেমার রোচ : ১৭-২-৬৩-১,

শ্যানন গাব্রিয়েল : ২০-৩-৭০-৪ (নো-৩),

রোস্টন চেজ : ১১-০-৪২-০,

জোমেল ওয়ারিকান : ২১.৪-৬-৬২-৪ (ও-১),

দেবেন্দ্র বিশু : ১৫-০-৬০-১,

ক্রেইগ ব্রাফেট  : ৮-১-১৯-০।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস :

ক্রেইগ ব্রাফেট  ক সৌম্য ব সাকিব                   ১৩

কাইরেন পাওয়েল এলবিডব্লু ব তাইজুল           ১৪

শাই হোপ বোল্ড ব সাকিব                          ১

সুনীল অ্যামব্রিস এলবিডব্লু ব নাইম                ১৯

রোস্টন চেজ ক ইমরুল ব নাইম                   ৩১

শিমরোন হেটমায়ার ক মুশফিক ব মিরাজ         ৬৩

শেন ডাউরিচ অপরাজিত                              ৬৩

দেবেন্দ্র বিশু এলবিডব্লু ব নাইম                    ৭

কেমার রোচ এলবিডব্লু ব নাইম                    ২

জোমেল ওয়ারিকান বোল্ড ব নাইম                ১২

শ্যানন গাব্রিয়েল ক মাহমুদুল্লাহ ব সাকিব          ৬

অতিরিক্ত (বা-৬, লে বা-২, নো-২, পেনাল্টি-৫) ১৫

মোট (অলআউট, ৬৪ ওভার)                      ২৪৬

উইকেট পতন : ১/২৯ (পাওয়েল), ২/৩০ (হোপ), ৩/৩১ (ব্রাফেট), ৪/৭৭ (চেজ), ৫/৮৮ (অ্যামব্রিস), ৬/১৮০ (হেটমায়ার), ৭/১৯৯ (বিশু), ৮/২০৫ (রোচ), ৯/২২৫ (ওয়ারিকান), ১০/২৪৬ (গাব্রিয়েল)।

বাংলাদেশ বোলিং :

মুস্তাফিজ : ২-১-৪-০ (নো-২),

মেহেদি হাসান মিরাজ : ১৫-০-৬৭-১,

তাইজুল ইসলাম : ২০-৩-৫১-১,

সাকিব আল হাসান : ১১-১-৪৩-৩,

নাইম হাসান : ১৪-২-৬১-৫,

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ : ২-০-৭-০।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :

ইমরুল কায়েস বোল্ড ব ওয়ারিকান ২

সৌম্য সরকার ক ব্রাফেট  ব চেজ    ১১

মোমিনুল হক এলবিডব্লুব ব চেজ    ১২

মোহাম্মদ মিথুন বোল্ড ব বিশু        ১৭

সাকিব আল হাসান ক গাব্রিয়েল ব ওয়ারিকান      ১

মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ১১

মেহেদি হাসান মিরাজ অপরাজিত    ০

অতিরিক্ত (লে বা-১)  ১

মোট (৫ উইকেট, ১৭ ওভার)          ৫৫

উইকেট পতন : ১/১৩ (ইমরুল), ২/১৩ (সৌম্য), ৩/৩২ (মোমিনুল), ৪/৩৫ (সাকিব), ৫/৫৩ (মিথুন)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :

কেমার রোচ : ১-০-১১-০,

জোমেল ওয়ারিকান : ৮-০-২২-২,

রোস্টন চেজ : ৫-১-১৬-২,

দেবেন্দ্র বিশু : ৩-০-৫-১।