উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের উদ্যোগ নির্বাচনী ইশতিহারে দেখতে চাই : সিপিডি

750

ঢাকা, ২২ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ২০১৯ সাল থেকে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য যে সরকার নির্বাচিত হবে তারা দেশের অর্থনীতির কাঠামোগত রুপান্তরের মুহূর্তে ক্ষমতায় আসছে। কারণ এ সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হবে। আসন্ন নির্বাচনে যে রাজনৈতিক দল বা জোট ক্ষমতায় যাবে তারা স্বল্পোন্নত দেশের দায়িত্ব নেবে।মেয়াদ শেষ করবে উন্নয়নশীল দেশের সরকার হিসেবে। এজন্য দেশের এই অর্থনৈতিক কাঠামোগত রূপান্তর টেকসই করতে রাজনৈতিক দলগুলোর কি কি উদ্যোগ থাকবে আসন্ন নির্বাচনের ইশতিহারে তা স্পষ্ট থাকা উচিত।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ‘দ্যা লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিস রিপোর্ট-২০১৮’ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এমন অভিমত তুলে ধরেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আঙ্কটাডের প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংস্থার সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্ষ ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরনই উন্নয়নের শেষ কথা নয়। উত্তরনে মসৃন,সুগম পথ সৃষ্টি করতে হবে।এর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন।এর অর্থ হচ্ছে শিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এজন্য দরকার সুশাসন। সুশাসন ছাড়া উৎপাদনশীল খাতগুলোতে সম্পদের পুনঃবন্টন হবে না।আর এসবের চালিকাশক্তি হচ্ছে উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করলে, মুনাফা বাড়ানোর আগ্রহ থাকলেই এসব সম্ভব হবে।উদ্যোক্তাদের এসব স্পৃহা সৃষ্টি করতে হলে দরকার প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনীতি।
দেবপ্রিয় আরো বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনীতি হচ্ছে নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সুবিধা সার্বজনীন করা। বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তি শুধু সুবিধা পাবে,অন্যরা পাবে না তা হবে না। বর্তমানে ব্যবসা-রাজনীতি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করছেন। অনেক ব্যবসায়ী রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কারণে কর অবকাশ, বিভিন্ন ব্যবসার লাইসেন্সসহ সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে তিনি নির্বাচনী হলফনামায় দেয়া প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ঋণ খেলাপী ও কর ফাঁকিবাজদের তথ্যও জনগণের সামনে তুলে ধরার পরামর্শ দেন তিনি।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,সকল উন্নয়নই রাজনৈতিক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।এজন্য এলডিসি গ্রাজুয়েশন প্রক্রিয়া কি হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতিহারে ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র থেকে উদ্যোক্তা রাষ্ট্রে রূপান্তরের নীতিতে যেতে হবে। এজন্য উদ্যোক্তাদের লাইফ সাইকেল সাপোর্ট দিতে হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষম করে গড়ে তোলার মত তহবিল সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে হবে।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতিরি জন্য যেসব আইনি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তাতে বড় ব্যবসায়ীরাই সুবিধা পায়। এসব নীতিমালা ছোট উদ্যোক্তা তৈরীতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। কারণ নীতি কাঠামো গড়পড়তা। অথচ উন্নয়নশীল অর্থনীতি হতে হলে ছোট উদ্যোক্তা তৈরিতেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগি হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ক্রেতাদের ইচ্ছায় উদ্যোক্তা তৈরী হচ্ছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা ক্রেতা তৈরি করতে পারছে না। বাংলাদেশের এখন এ ধরনের উদ্যোক্তা জরুরি। এর পাশাপাশি রফতানি পণ্যে বৈচিত্র আনতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বৈষম্য কমানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলগুলো কি পদক্ষেপ নেবে তা ইশতিহারে উল্লেখ করার আহবান জানান।