বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : প্রধানমন্ত্রীত্বকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসেবে দেখি : প্রধানমন্ত্রী

189

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সশস্ত্রবাহিনী দিবস-ভাষণ
প্রধানমন্ত্রীত্বকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসেবে দেখি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘এটা আমার কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় যে, মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা দুঃখ-কষ্টে থাকবেন।’
প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে সেজন্য তাঁর আপ্রাণ প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি আমার পদক্ষেপসমূহ অব্যাহত রাখবো এবং আপনারা যেকোন সমস্যার কথা আমাকে জানাতে পারেন।’
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে গৃহীত তাঁর সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থ বছর থেকে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাদের ৫ হাজার টাকা বিজয় দিবস ভাতা এবং ২ হাজার টাকা নববর্ষ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।’
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৮ পাস হয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হয়েছে।
‘এখন থেকে সশস্ত্র বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের উত্তরাধিকারীগণ-এর সম্মানী ভাতা পেতে আর সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে না,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাগণকে শিক্ষা ভাতা, কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে বিবাহ ভাতা, উৎসব ভাতা, দেশে বিদেশে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রায় তিনশত কোটি টাকা ব্যয়ে তিন হাজার পাকা গৃহ নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মুজিব নগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধকালীন আলোচিত সম্মুখ সমরের স্থানগুলো সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ এবং ৩১৫টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ এবং ৬০ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভূতপূর্ব অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে ম্মরণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
‘এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যাতে করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই ইতিহাস জানতে পারে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি হতে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছে।
তিনি বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ডের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একক ও যৌথভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃজনে ঋণ প্রদান করছে। এ পর্যন্ত ৩৪,৮১৯ জন এ ঋণ গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সুমহান দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর উপর ন্যস্ত।
তিনি বলেন, ‘এ পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আইন-শৃংখলা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বশীল অংশগ্রহণ বজায় রাখছে। আমি এজন্য সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করার জন্য সততা, নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আপনারা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
এরআগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার এবং খেতাবপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে উপহার সামগ্রী এবং সম্মানীর চেক বিতরণ করেন।
তিনি কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনবাহিনীর ১৩ জন সদস্যের মাঝে ’বাহিনী পদক’ ও বিতরণ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসাকে (৭০) দেখতে যান।
তিনি রোগীর শয্যাপাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন।
বাসস/এসএইচ/অনুবাদ-এফএন/১৬৫০/কেজিএ