বাজিস-২ : মেহেরপুরে ভৈরব নদ পুনঃখননে ফিরে আসছে দেশী মাছ

230

বাজিস-২
মেহেরপুর-দেশী মাছ
মেহেরপুরে ভৈরব নদ পুনঃখননে ফিরে আসছে দেশী মাছ
॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২১ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলার হাট-বাজারে দেশী মাছের বড় আকাল দেখা দিয়েছে। এক সময় মেহেরপুরের বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা থেকে দেশী প্রজাতির বাইম, মাগুর, কই, শৈল, বোয়াল, বেলে, চান্দা, পটকা, পুঁটি, টেংরা, আইড়, কাল বাউস, বাঁশ পাতা, পাতাশী, চেলা, ডাড়কি, চ্যাং, চান্দা, ভ্যাদা, টাকীসহ অসংখ্য মাছ পাওয়া যেত, যা এলাকার চাহিদা মিটিয়েও জেলেরা এইসব মাছ নিকটবর্তী জেলাগুলোতে বাজারজাত করে রোজগার করত। এখন জেলার চাহিদার সিকিভাগও পুরণ হয় না। তবে এক সময়ের মেহেরপুরের প্রমত্ত ভৈরবনদ পুনঃখননে ফের দেশী মাছের দেখা মিলছে। যা এতদিন ছিল বিরল।
অনুকূল পরিবেশের অভাবে নদ-নদী জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ হারিয়েই যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর জেলার চাহিদার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মাছের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এলাকাগুলোতে অধিক পরিমাণে অভয়াশ্রম তৈরি করা গেলে বিলুপ্ত প্রায় দেশী প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তারের পাশাপাশি ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে। জেলার ৪টি নদ-নদী ও ৪২টি খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় এখন একমাত্র অপার ভৈরবনদ বাদে নদী ও খাল বিলে আমন ধান চাষ করা হচ্ছে। জেলার অনেক ডোবা পুকুর ভরাট করে পাকা দালান নির্মাণ করা হয়েছে। আরও নির্মাণ কাজ চলছে। ফলে মৎস্য চাষের প্রজন্ম ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে অনুকূল পরিবেশের অভাবে দেশী প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। দেশী মাছ রক্ষার জন্য মৎস্য চাষিদের পাশাপাশি কৃষকদেরও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজের সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। মেহেরপুরের সবকটি বিলই এখন দেশী মাছ শূন্য প্রায়। বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার, কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস, কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগে ও বিভিন্ন কারণে মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন মৎসজীবী ভক্ত হালদার। এতে মাছ উৎপাদনের প্রজনন কেন্দ্রগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে মেহেরপুরের নদ-নদী ও খাল-বিলসহ পুকুরগুলোও একেবারে দেশী মাছশূন্য হয়ে যাবে বলে শংকা প্রকাশ করেছেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা। আমাদের চিরাচরিত প্রবাদ ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’ অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মত মাছ এখন আর পাওয়া যায় না বললেই চলে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকতা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া জানান, মাছের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরে ফেলা, প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়া ও বিষ প্রয়োগ করায় মৎস্য সম্পদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, যা অচেতন ও অসচেতন নাগরিক, জেলেরা বুঝতে পারে না। তবে গতবছর ভৈরব নদ খননে নদে পানি প্রবাহ ফিরে এসেছে। সেখানে দেশী মাছ পাওয়া যাবে, যা জেলার চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাসস/সংবাদদাতা/১৩১০/মহ/নূসী