বৈষম্য কমাতে অধিকতর জনবান্ধব কর ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ

900

ঢাকা, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : বাংলাদেশের একজন উচ্চবিত্ত বা ধনী মানুষ পণ্য কিনতে যে হারে কর দেন,একজন শ্রমিক বা নিম্ন আয়ের মানুষও একই হারে কর দেন। ফলে একদিকে বৈষম্য বাড়ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচও বাড়ছে। আবার বর্তমান কর ব্যবস্থায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ধনী ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থপাচার ও কর ফাঁকি দিচ্ছে। ফলে দেশ চালাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের উপর কর আরোপ করছে সরকার। তাই এমন প্রেক্ষাপটে অধিকতর জনবান্ধব কর ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জনগণের কর আদলত’ নামের একটি অনুষ্ঠানে এমন কথা উঠে আসে।
জাতীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন,বর্তমান ব্যবস্থায় মূল্য সংযোজন কর পোশাক শ্রমিক,শিক্ষার্থী ও বস্তিবাসীসহ মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য বৈষম্যমূলক। আবার বিদেশে অর্থপাচার, ধনীদের ট্যাক্স ফাঁকি কিংবা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির কারণে সরকার সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করতে হচ্ছে।
‘কর আদালতে’ পাঁচটি বিষয়ে অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।
অভিযোগের এমিকাস কিউরি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘কর অন্যায্যতা ও অযৌক্তিতার কারণে ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত কর প্রদান করছেন। কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না।’
দ্বিতীয় অধিবেশনে শুনানি হয় কর্পোরেট কর ফাঁকি ও এর প্রভাব নিয়ে। এই অধিবেশনে এ বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হয়। একশনএইড-এর গবেষণা বলছে, সরকারের সঙ্গে চুক্তির ফাঁক দিয়ে বাংলাদেশে কাজ করা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর প্রায় ৭০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুসারে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৮টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ৩৪৫ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে।অন্যদিকে ৩টি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিসহ ১০টি বহুজাতিক কোম্পানির সরকারের কাছে বকেয়া রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা।
অনুষ্ঠানে ধারণাপত্রে বলা হয়, বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানির দ্বারা বিপুল পরিমাণ টাকার কর ফাঁকি ও অর্থপাচার যদি রোধ করা সম্ভব হয় তাহলে বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে। আর টাকা দিয়ে সাধারন জনগণের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ উপযুক্ত মানের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি দেশে প্রচলিত কর প্রথার যেই অসম বন্টন ব্যবস্থা রয়েছে তার প্রতিকার সম্ভব হবে। সাধারন জনগণের মাথা থেকে ভ্যাটের বোঝাও কমবে।
জনগণের এই কর আদালতের বিচারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ‘সরকার প্রণীত নীতি ও আইনগুলো এমন যাতে রাজস্ব আয়ের বোঝাটা গিয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের উপর। পরোক্ষ করের পরিমাণ যেখানে কম হওয়ার কথা সেখানে সাধারণ মানুষকেই সেই কর বেশি দিতে হয়।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও বিচারক ফারাহ্ কবির বলেন, ‘আমরা কর দিতে চাই। তবে সেই কর হওয়া উচিত সাধারন জনবান্ধব। সাধারণ জনগোষ্ঠীর ওপর থেকে ভ্যাটের বোঝা কমাতে বাংলাদেশ সরকারের কর্পোরেট কর আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’
অনুষ্ঠানে জনানো হয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমান্তরালে অবস্থানকারী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের কর সংগ্রহের হার এখনও অনেক কম। যা ২০০৯ থেকে ২০১৮ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৮ থেকে ১০.৩৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে সরকার চাইলেই এই অনুপাত সহজেই ১৬ শতাংশে নিয়ে যেতে পারে। আর তার জন্য সরকারকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে কর্পোরেট করসহ অন্তর্ভুক্তিমূলক কর ব্যবস্থার উপর।