নীলফামারী, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ইভটিজিং প্রতিরোধ ও নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েরা আগ্রহী হয়ে উঠছে কারাত প্রশিক্ষণে। গত ৫ বছরে ৬৩টি ব্যাচে ১হাজার ৮৯০ জন মেয়ে শিক্ষার্থী এপর্যন্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।
জেলা সদরের দুবাছুড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন একটি ছয় দিনের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয় গত রোববার দুপুরে। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ওই বিদ্যালয়ের ২৫ জন ছাত্রী।
প্রশিক্ষণ শেষে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন,‘প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, মানষিক বিকাশ ঘটেছে। আমরা মেয়েরা স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হই, ওই প্রশিক্ষণে নিজেকে রক্ষার কৌশল শিখেছি। এখন আমরা যে কোন আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো’। প্রশিক্ষণের বিষয় বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীর মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায় সে।
অপর শিক্ষার্থী শরীফা আক্তার বলেন,‘নিজেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে প্রশিক্ষণটি জরুরী। মেয়েদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা সকলে মিলে একটি সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে চাই’।
কারাত প্রশিক্ষক গায়েত্রী রায় বলেন,‘বিভিন্ন উদ্যোগে জেলায় আমি গত ৫ বছরে ৬৩টি ব্যাচে ১ হাজার ৮৯০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। তারা সকলে স্কুল ও কলেজের ছাত্রী। প্রশিক্ষণের অর্জন তারা নিজেকে রক্ষার কাজে ব্যবহার করছে। তারা সক্ষম হচ্ছে ইভটিজিং প্রতিরোধে। কারাত প্রশিক্ষণের ফলে তারা নিজেকে যেকোন আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে। প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে গিয়ে মেয়েদের যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। অনেকে আগ্রহী হয়ে আমার কাছে ছুটে আসছে’।
দুবাছুড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে একটি কোর্সে ২৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা সকলে নিজেকে রক্ষার মনোবল ফিরে পেয়েছে। ওই প্রশিক্ষণ নিতে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আগ্রহ প্রকাশ করেছে’।
২০১৪ সাল থেকে জেলায় মেয়েদের ওই কারাত প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজটি করছে উদয়াঙ্কুর সেবা সংস্থা (ইউএসএস)। মেয়েদের এগিয়ে নিতে জে-ার সমতা প্রকল্পের অধীনে গ্রহণ করেছে বিভিন্ন উদ্যোগ। সংস্থাটির সমন্বয়কারী শাহনাজ বেগম বলেন,‘কারাত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে। সমাজের যেকোন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার মনোবল তৈরি হচ্ছে। গত ৫ বছরে বিভিন্ন স্কুল কলেজে মোট ৬৩টি ব্যাচে প্রায় ২ হাজারের মতো মেয়েকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা অনেকটাই সাহসী হয়ে উঠেছে, জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার মনোবল তৈরি হয়েছে’।