বরগুনায় ক্ষুদ্র শিল্পের সাথে ভারী শিল্প-কারখানাও তৈরি হচ্ছে

224

॥ খায়রুল বাশার বুলবুল ॥
বরগুনা, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : উপকূলীয় বরগুনা জেলার তালতলীর নিশানবাড়িয়াতে চীন-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তেতুঁলবাড়িয়া এলাকায় খুলনা শিপ ইয়ার্ডের সম্প্রসারণ ডক ইয়ার্ড তৈরি হচ্ছে। দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ যমুনা ৫ শ’ একর জমি ক্রয় করছে স্টিল মিল, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি প্রভৃতি স্থাপনার জন্য। অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের প্রত্যন্ত বরগুনা জেলা শিল্প এলাকার তকমা পেতে যাচ্ছে।
এ জেলায় প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আবাদি এবং অনাবাদি জমি, বনরাজি এবং পর্যটন কেন্দ্র সোনাকাটা, হরিণঘাটা। এখানে বসবাস করে ঐতিহ্যবাহী রাখাইন সম্প্রদায়। জেলার ৬টি উপজেলায় আরও বিভিন্ন ধরনের ছোট এবং মাঝারি শিল্প, কল-কারখানা গড়ে ওঠার উপযোগিতা রয়েছে। জেলায় শিল্প কল-কারখানার তৈরি হলে একদিকে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তেমনি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান, আর্থিক উন্নয়ন ও শিক্ষা-দীক্ষাসহ জীবন-যাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে। শুধু শিল্প কারখানাই নয় তার পাশাপাশি মানুষের জন্য হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, পাঠাগার ইত্যাদিও তৈরি করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান আইসোটেকের চেয়ারম্যান মইনুল আলমের বরাত দিয়ে মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
বরগুনা জেলাটি কৃষি নির্ভর হলেও এখানে মৎস্যজীবিদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। রয়েছে পঞ্চাশ হাজারের বেশি জেলে পরিবার। এখানকার জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরের ও খর¯্রােতা নদীগুলো থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ শিকার করে। বেশীরভাগ সময়েই আহরিত মাছ পঁচে যাওয়ার ভয়ে স্বল্প মূল্যে জেলেরা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। এখানে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তালতলী উপজেলার সাগর পাড়ের আশার চরে রয়েছে শুঁটকি পল্লী। কয়েক হাজার মানুষ শুটকি পল্লীতে কর্মরত। দেশের বিভিন্ন পোলট্রি ও ফিস ফিডের কারখানাগুলো তালতলী থেকে কাঁচামাল হিসেবে শুুঁটকি সংগ্রহ করে ট্রলার ও ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যায়। শুঁটকিকে কেন্দ্র করে এখানে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড শিল্প গড়ে উঠছে।
বরগুনার পায়রা, বিশখালী নদী থেকে আহরণ করা হয় গলদা ও বাগদা রেনু পোনা। বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি ঘেরগুলোতে রেণু পোনা রফতানি করা হয়। চিংড়ির রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য মৎস্য হ্যাচারী এবং বাণিজ্যিক চাষের জন্য ঘের শিল্প গড়ে তোলা খুবই সহজ, আলাপ কালে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলী।
কৃষি বিভাগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ জেলার জলাভূমিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শামুক পাওয়া যায়। চুন তৈরীর উপকরণ ও মাছের খাদ্য হিসেবে সেগুলো চালান হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শামুককে কেন্দ্র করে কুটির বা ছোট শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে।
স্থানীয় চাষীরা ধান, বাদাম, ডাল, মিষ্টি কুমড়ো, আলু, তরমুজ, বাঙ্গিসহ নানা জাতের ফসল উৎপাদন করে থাকে। এসব পণ্য দেশে রফতানি করা হয়।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহি নূর আজম জানিয়েছেন, এখানকার জমিতে আউস, আমন, ইরি, বোরোসহ নানা জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরে উৎপাদিত ধান মুন্সীগঞ্জ, মদনগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে চালান করা হয়। সেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ ধান থেকে বাহারী নামের ও আকৃতির চালে রূপান্তর করিয়ে কয়েকগুণ বেশী দামে আবার এই অঞ্চলেই বিক্রি করা হচ্ছে।
বরগুনার সদরের বালিয়াতলী এবং তালতলী উপজেলায় রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। এ দুটি স্থানে রাখাইনদের নিজস্ব তাঁত শিল্প রয়েছে। তাদের তাঁত শিল্পের অনেক চাহিদা। বরগুনার মাটি দিয়ে ভালো মানের ইট তৈরি হওয়াতে ছোটবড় মিলিয়ে এ জেলায় হাজার খানেক ইটের ভাটা, ব্রিকস ফিল্ড রয়েছে।
তালতলী, সোনাকাটা, আশারচর, ফকিরহাট, বরগুনার বালিয়াতলী, বেতাগীর বিবিচিনি, পাথরঘাটার হরিণঘাটসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট রয়েছে। এগুলো আরো উন্নয়ন করলে পর্যটন শিল্পের অনেক সম্ভাবনা দেখা দেবে।