নতুন করে বাঁচতে শিখছেন সিরিয়ার যুদ্ধাহত অন্ধরা

215

আঞ্জারা (সিরিয়া), ১৪ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস ডেস্ক) : সিরিয়ার আসাদ বিরোধী বিদ্রোহী বাহিনীর সাবেক যোদ্ধা আহমেদ তালহা যুদ্ধে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তিনি এখন অন্ধদের স্মার্ট ফোনের বিভিন্ন নির্দেশনা অনুবাদ করে দিচ্ছেন।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আলেপ্পোর একটি ক্লাসরুমে তিনি তার মতো অন্ধদের সহায়তা করছেন। তিনি একটি স্ক্রিন রিডার অ্যাপ এর সহায়তায় তাদের আরো ভালভাবে স্মার্টফোন চালানো শেখাচ্ছেন। খবর এএফপি’র।
তালহা (২৪) বলেন, ‘আমার খুবই ইচ্ছে সকল অন্ধ যেন তাদের ডিভাইসের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারে।’
বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহর আঞ্জারায় কিশোর থেকে সব বয়সী মানুষ গভীর মনযোগের সাথে ফোন হাতে নিয়ে নির্দেশনা শুনছেন।
ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মাদ রমজান বলেন, ‘আপনারা আপনাদের হোয়াটসআপ খুলুন।’
তিনি বাদামী চামড়ার জ্যাকেট পরে আছেন, চোখে সানগ্লাস।
ছাত্ররা ম্যাসেজিং সার্ভিস খুঁজতে স্ক্রল করে যাচ্ছে। ক্লাসরুমটি ক্ষীণ কৃত্রিম কণ্ঠস্বরে গম গম করে উঠছে। কৃত্রিম কণ্ঠস্বরের নির্দেশ মতো অন্ধরা নির্দিষ্ট আইকন খুঁজে নিচ্ছে।
কণ্ঠস্বরগুলো নারী ও পুরুষ উভয়েরই। কৃত্রিম কণ্ঠগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ দ্রুতগতিতে নির্দেশনা দেয়।
তালহা বলেন, তিনি অনলাইনে এই ইংরেজি স্ক্রিন রিডার অ্যাপ্লিকেশন পেয়েছেন। তিনি এর নির্দেশনাগুলো তার বন্ধুদের আরবিতে অনুবাদ করে দেন।
অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহারকারীকে বলে দেয়, তারা কোন পেজে আছেন, তারা এর মাধ্যমে কি করতে পারেন এবং অ্যাপ্লিকেশনটি ওই পেজের লেখাগুলো অন্ধদের পড়ে শোনায়।
তালহা কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে সিরিয়ার স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দেন।
কিন্তু দুই বছর পর তার মাথায় গুলি লাগলে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এই যুুবক বলেন, ‘আমি হার মানিনি। আমি নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করছি।’
তালহা তার প্রথম বিয়ে করেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে পুনরায় পড়াশুনা শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি অপর এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। ওই নারীও অন্ধ।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার ডান চোখে সামান্য দেখতে পাই।’
তিন সন্তানের এই জনক বলেন, ‘মনে হয় ঘোর অন্ধকারের মধ্যে সামান্য আলো। অনেকটা বড় একটি ঘরের মধ্যে মোমবাতির ক্ষীণ আলো।’
বাড়িতে এসে তালহা তার এক বছর বয়সী মেয়ে আলিকার হাত ধরে তাকে হাঁটতে সহায়তা করেন। তিনি তার তিন বছরের ছেলে হাসানের ফোনে ইউটিউবের মাধ্যমে কথা বলেন।
তিনি মাস আগে তার প্রথম স্ত্রী আরেকটি মেয়ের জন্ম দিয়েছেন।
তার প্রথম স্ত্রী সামিয়া বলেন, ‘আমদের জীবনে কিছুরই অভাব নেই।’
তিনি তার স্বামীকে নিয়ে গর্ব করে বলেন, ‘তাকে কিছুই থামাতে পারে না।’ তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললেও, তার একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’
স্কুল সম্পর্কে তালহা বলেন, ‘এটা অন্ধদের স্থান। আমরা একস্থানে জড়ো হয়েছি, আমরা সক্রিয়, আমরা আমাদের অধিকার চাই।’
নিজেরাই পাথর নির্মিত একতলা স্কুল ভবনটির অধিকাংশ অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সামান্য সহায়তা এসেছে।
প্রতিদিন বন্ধুদের সহায়তায় পায়ে হেঁটে বেশ কিছু অন্ধ মানুষ এখানে শিখতে আসেন।
পরিচালক আহমেদ খলিল বলেন, এই সেন্টারটি বিমান হামলাসহ সাত বছরের সিরীয় যুদ্ধে যারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।