বাজিস-২
বরগুনা-জোন
সেতু ও শিল্প নির্মাণে বরগুনা অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হচ্ছে
বরগুনা, ৯ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলার তালতলীর নিশানবাড়িয়ায় কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেতুলবাড়িয়ায় জাহাজ ভাঙ্গা ও নির্মাণ কারখানা স্থাপন, পায়রা নদীর ওপর সেতু দুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে। কর্মসংস্থানের পরিসরও বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
জানা গেছে, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ ভাঙ্গা ও নির্মাণ শিল্প, সেতু নির্মাণসহ নানা প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। সেই সাথে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করছে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক আমূল পরিবর্তন আশা করছে বরগুনার মানুষ।
দেখা গেছে, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়ায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ ও বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আইসোটেক ইলেট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আর্থ ডেভেলপমেন্ট কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে।
এখানে প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক এখনই কর্মরত রয়েছে। এদেরকে আন্তর্জাতিক মজুরি চুক্তি অনুযায়ী বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে এই প্রকল্পে আরও লোকবল নিয়োগ করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হলে সাড়ে তিন হাজার মানুষ কর্মসংস্থান পাবে বলে আইসোটেক গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী জানান।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ওই এলাকায় শুধু বিদ্যুৎ প্লান্ট নয়, সেখানে কর্মরতদের ও স্থানীয়দের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল হবে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির করা হবে। প্রকল্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে।
আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঈনুল আলম জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়া হচ্ছে।
জাহাজ ভাঙ্গা ও নির্মাণ শিল্পের জন্য পায়রা নদী সংলগ্ন তালতলীর তেঁতুলবাড়িয়ায় নৌবাহিনী ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব জাহাজ নির্মাণ ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ওই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনে পর্যটন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির আকাক্সক্ষায় এলাকার মানুষ আনন্দিত।
বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড এর সম্প্রসারণের জন্য ১৬২ একর এবং শিপ বিল্ডিং ও শিপ রিসাইক্লিং এর জন্য ১০৫ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তাছাড়া দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী যমুনা গ্রুপ তালতলীতে ভারী ও মাঝারি শিল্পের জন্য জমি ক্রয় করছে।
এছাড়াও পায়রা নদীর বরগুনা-আমতলী অংশে সেতু নির্মাণে স্থান নির্বাচনে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ সেতু নির্মিত হলে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে সরাসরি দেশের বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে বরগুনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসবেন এখানে বিনিয়োগ করতে। আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আমতলী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল হোসেন বিশ্বাস।
বরগুনার বর্তমার জেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, লেবুখালিতে নির্মীয়মান পায়রা সেতু, বরগুনা-আমতলী অংশে ২য় পায়রা সেতু এবং বিষখালি নদীতে সেতু, জাহাজ ভাঙ্গা ও নির্মাণ শিল্প এবং তাপবিদুত কেন্দ্র চালু হলে উপকৃত হবেন বরগুনা জেলার বাসিন্দারা। অবহেলিত এ জেলাটি দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হবে।
বাসস/সংবাদদাতা/১২৩৫/-মরপা