বাসস দেশ-২৪ : নকশিকাঁথা একটি জীবন্ত শিল্প : জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

290

বাসস দেশ-২৪
নকশিকাঁথা- গ্রন্থ – প্রকাশনা
নকশিকাঁথা একটি জীবন্ত শিল্প : জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
ঢাকা, ৫ই নভেম্বর ২০১৮ (বাসস) : জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, নকশিকাঁথা একটি জীবন্ত শিল্প এবং কোনো না কোনোভাবে এটি এখনো টিকে আছে। এই শিল্প সকলের উৎসাহ ও প্রচেষ্টায় টিকে থাকবে। সত্যিকার নকশিকাঁথা বিকশিত হওয়ার জন্য প্রকাশনার মত কাজ আরো প্রয়োজন আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আজ সোমবার, বিকেল ৪ টায় বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রে ‘নকশিকাঁথা: বাংলাদেশের নন্দিত শিল্পের স্মারক’ শীর্ষক সচিত্র গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বইটির লেখক মালেকা খান। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে চিত্রশিল্পী শিল্পী হাশেম খান,সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আক্তারী মমতাজ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক আব্দুল মান্নান ইলিয়াস প্রমুখ। আলোচনা পর্ব শেষে সংগীত পরিবেশন করেন লালন স¤্রাজ্ঞী খ্যাত শিল্পী ফরিদা পারভীন।
হাশেম খান বলেন, গ্রন্থটি নকশিকাঁথার উপর আকর গ্রন্থ হিসেবে থেকে যাবে। প্রকাশক-সম্পাদক তাসমিমা হোসেন এই মহতী কাজের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে অসামান্য দায়িত্ব পালন করেছেন। মালেকা খান নিষ্ঠার সঙ্গে নশকিকাঁথার ভিতরে গিয়ে বিশদে কাজটি করেছেন। সচিত্র বইটি নিজেই একটি ‘নকশিকাঁথা’ হয়ে উঠেছে। নিজেদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সাবধান হতে হবে। নকশিকাঁথা বাণিজ্যিক করতে গিয়ে এর প্রকৃত শিল্পমূল্য যেন অটুট থাকে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে তাসমিমা হোসেন বলেন, নারীদের সংসারের দক্ষতা তাঁর জন্য ব্যবসা করে আয় করার পথ তৈরি করে দিয়েছে। ঘরে বসে নারীরা যে আয় করতে পারেনÑ সে ক্ষেত্রে মালেকা খান একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে এসেছেন। লোকশিল্পের প্রসারে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সারাজীবনের নানা অর্জনের পর মালেকা খানের আরেকটি সংযোজন নকশিকাঁথা নিয়ে এই গবেষণাকর্ম।
আক্তারী মমতাজ বলেন, নকশিকাঁথা ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব-ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মনোনীত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্পদ নকশিকাঁথা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদেরকে আরো বেশি উৎসাহিত করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যকে ধারণের প্রবাহমান ধারা তৈরি করতে প্রকাশিত গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, নকশিকাঁথা নিয়ে চমৎকার একটি প্রয়াস। গ্রন্থটি আমাদের নকশিকাঁথার গভীরে নিয়ে যাবে। নকশিকাঁথাকে বিশ^ সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ইউনেস্কোতে প্রয়োজনয়ি কাজগপত্র জমা দেয়া হচ্ছে।
মালেকা খান বলেন, গ্রন্থটির প্রকাশনা আমার দীর্ঘদিনের অধ্যাবসায় ও অনেক মানুষের সহযোগিতার ফসল। শক্তিশালী ও আস্থাবান মানুষ অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের কারণে আজ আলোর মুখ দেখলো। আমার অন্তর থেকে কিছু না আসলে লিখতে পারি না, নকশিকাঁথা বিষয়ক গ্রন্থটি আমার ভেতরের তাগাদা ও অসংখ্য মানুষের প্রেরণায় লেখা। নানা মাত্রায় নকশিকাঁথার ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে গ্রন্থটিতে।
‘নকশিকাঁথা: বাংলাদেশের নন্দিত শিল্পের স্মারক’ বইটিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পী এবং একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের নকশিকাঁথা বোনা নারীর অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে: ‘বাংলাদেশের নকশিকাঁথা: অতীত দিনের কথা’, ‘নকশিকাঁথা: পথিকৃৎজন’, ‘নারীর অবদান’, ‘কাঁথার সাংস্কৃতিক অবদান’, ‘নকশার শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য’, ‘নকশিকাঁথা : শিল্পও শিল্পী’, ‘নকশার প্রতীক, কাঁথার মোটিফ, নকশিকাঁথার ঐতিহ্য, কথাসাহিত্যে কাঁথা, একাত্তরে কাঁথার ভূমিকাসহ মোট ৪০টি বিষয়ভিত্তিক অধ্যায় রয়েছে।
বাসস/সবি/এমএআর/২০৩৫/কেএমকে