বরিশালে একটি বাড়ি একটি খামার গ্রামীণ জনপদের ভাগ্যে পরির্বতন এনে দিয়েছে

267

বরিশাল, ৫ নভেম্বর ২০১৮ (বাসস) : একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অর্থ সহায়তা ঋণ জেলার গ্রামীণ জনপদের সহ¯্রাধিক দরিদ্র, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষিজীবি পরিবারের ভাগ্যে পরির্বতন এনে দিয়েছে।
জেলার সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ, আইচা গ্রামের একটি বাড়ি একটি খামার সমিতির সদস্য ময়না বেগম জানান, দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য আমাকে চরম আর্থিক কষ্ট ও অনিশ্চয়তার মাঝে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু সবজী চাষ ও শীতকালীন আগাম সবজী চাষের আয় থেকে আমি বর্তমানে স্বাবলম্বী।
ময়না জানান, ২০১২ সালে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা নিয়ে স্বামী নাজমুল হককে নিয়ে সবজী চাষ শুরু করেন। পরে আরো কিছু জমি লিজ নিয়ে সবজী চাষ করতে শুরু করেন তিনি। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। শুরু করেন নতুন জীবন।
ময়না আরো জানান, বর্তমানে আমার কোন আর্থিক কষ্ট নেই। সবজী চাষ করে বছরে দুই লক্ষ টাকার বেশি আয় করেন তিনি। আর তা সম্ভব হয়েছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অর্থ সহায়তা দিয়ে। এখন আমি খুব খুশি। কারণ, আমি সবজী বিক্রি করে নিয়মিত রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছি। বর্তমানে আমি স্বাবলম্বী।
অপরদিকে, জেলার সদর উপজেলার জাগুয়া বামনীকাঠি গ্রামের একটি বাড়ি একটি খামার সমিতির সদস্য আকলিমা বেগম জানান, দারিদ্র্য আমার ওপর চরম ভাবে চেপে বসেছিল। মাঝে মধ্যেই না খেয়ে দিন কাটাতে হতো । কিন্তু গরু, ছাগল পালন ও চা, পান-এর দোকানের আয় থেকে আমি এখন স্বাবলম্বী হয়েছি।
আকলিমা জানান, ২০১২ সালে একটি বাড়ি একটি খামার সমিতি থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি চা ও পান’র দোকান দেই। পরে ২০১৪ সালে আবার ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দোকানের কিছু মালামাল ও একটি গরু ক্রয় করি। আজ আমার জমি, বাড়ি ও দোকানসহ দুইটি গরু ও দুইটি বাছুর রয়েছে। তার মধ্যে গরুর মূল হবে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা । আজ আমার সংসারে আর্থিক অভাব নেই। একটি বাড়ি একটি খামার সমিতি থেকে বর্তমানে আমাকে ঋণ দিতে চায়, কিন্তু আমার লাগছে না।
একটি বাড়ি একটি খামার সমিতির সমন্বয়কারী জীনাত জাহান তুলি বলেন, সরকার দেশের সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাভাবিক ও মানসম্মত জীবন যাপনের সুযোগ করে দিতে ২০২০ সালের মধ্যে দেশব্যাপি এক লাখ গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করবে।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)-এর উপ-পরিচালক মো. জহিরুল হক মৃধা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর দারিদ্র বিমোচনে প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন একান্ত ভাবে কাম্য।
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগ ও দারিদ্র বিমোচনে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি হচ্ছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। গ্রামীণ জনগোষ্ঠির দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রকল্পটি। আমাদের সকলের যার যার অবস্থান থেকে আন্তরিক ভাবে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।
বরিশালের সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র বিমোচনে স্থায়ী তহবিলের ব্যবস্থা করা এবং ওই তহবিলে আয়বর্ধক কাজে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করে স্থায়ী আয়ের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করে যাচ্ছে।