বাজিস-৭ : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে দখল ও দূষণে বৈরাণ নদ এখন সরু খাল

188

বাজিস-৭
টাঙ্গাইল-বৈরাণ- নদ
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে দখল ও দূষণে বৈরাণ নদ এখন সরু খাল
টাঙ্গাইল, ৩ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলার গোপালপুরের বৈরাণ নদে বর্ষায় থইথই পানি, খরস্রোত এখন আর দেখা যায় না। দূষণ আর দুই পার দখল হয়ে শহরের ‘আশীর্বাদ’খ্যাত বৈরাণ সরু খালে পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালীরা নদের নিচু এলাকা ভরাট করে দখলের পর সেখানে নির্মাণ করেছে স্থাপনা। নদের পার ঘেঁষে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লা-আবর্জনা অপসারণ না করে উল্টো শহরের বর্জ্য ফেলে নদের নিচু জায়গা ভরাট করছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয় লোকজন জানান, যমুনা ও ঝিনাই নদীর শাখা বৈরাণ নদ ধনবাড়ী, গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পাট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে বৈরাণের তীরে গড়ে ওঠে গোপালপুর শহর। ১৯৭৪ সালে গোপালপুর পৌরসভা ঘোষিত হলে জায়গার দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে নদ ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি শুরু করে। এভাবে ধীরে ধীরে নদের উভয় পার দখল করে গড়ে তোলা হয় বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, পাকা ভবন। অনেকে জায়গার বিপরীতে অবৈধভাবে কাগজ তৈরি করে নেয়। বৈরাণ নদের কোনাবাড়ী বাজার, থানা চত্বর, নন্দনপুর, চরপাড়া ও দক্ষিণ গোপালপুরে দখলের প্রবণতা বেশি।
স্থানীয়রা আরো জানান, বৈরাণ নদের সঙ্গে আশপাশের বেশ কয়েকটি খাল ও বিলের সংযোগ রয়েছে। গোপালপুর শহর অংশে নদ দখলের কারণে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে প্রায়ই খাল ও বিল এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে ফসল আবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পলশিয়া গ্রামের শফিক তালুকদার অভিযোগ করেন, গত বন্যায় বিলের রোপা আমন ডুবে যায়। বন্যা চলে গেলেও জলাবদ্ধতা থেকে যায়। ফলে সরিষা ও কলাই চাষ করা যায়নি।
গোপালপুরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ বাণীতোষ চক্রবর্তী জানান, বৈরাণ নদের সঙ্গে তাঁর ৫০ বছরের ইতিহাস জড়িত। আগে নদের নাব্যতা ছিল, প্রশস্থতাও ছিল অনেক। ফেরিতে নদ পার হতে হতো। এখন এর কিছুই নেই। তিনি আরও বলেন, নদের পারের জায়গা বন্দোবস্থ দেয়ার কোনো বিধান নেই বলেই জানি। তাহলে কিভাবে দুই পারের জায়গা ভরাট করে বাসা-বাড়ি, দোকানপাট উঠছে? তারা কাগজ তৈরি করতে পারল কিভাবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক শামসুল হক বলেন, বৈরাণ নদের অবস্থা খুবই খারাপ। দখল-দূষণে নদের প্রবাহ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে নদের পুরো প্রবাহই বন্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি।
গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রকিবুল হক ছানা বলেন, বৈরাণ নদের অবস্থা ভালো নেই। আশপাশের মানুষ বাসা-বাড়ি করে বেদখলে নিয়েছে নদের জায়গা। এটি এখন খালে রূপান্তর হয়েছে। এ অবস্থা চললে বৈরাণ আর নদ থাকবে না, বিলীন হয়ে যাবে। আগে পৌরসভা থেকেই নদের পারে ময়লা ফেলা হতো। আমি মেয়র হওয়ার পর তা বন্ধ করে দিয়েছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে নদ দখলমুক্ত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাসস/সংবাদদাতা/১৬২০/মরপা