কেরানীগঞ্জে একটি বাড়ি একটি খামার থেকে ঋণ নিয়ে ২ হাজার পরিবার স্বাবলম্বী

357

কেরানীগঞ্জ, ৩ নভেম্বর ২০১৮ (বাসস) : ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি বাড়ি একটি খামার থেকে ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে প্রায় ২ হাজার পরিবার। এতে করে এক দিকে যেমন বেকারত্বের সংখ্যা কমেছে অপর দিকে কেরানীগঞ্জে দরিদ্রের হারও কমেছে। এ প্রকল্পের আওতায় হাস-মুরগী, গরু-ছাগল ও মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন ফার্মে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে অনেক নারী- পুরুষ সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। পাশা পাশি পরিবারের দারিদ্রতা দূর করে নিজেদের করেছে স্বাবলন্বী।
একটি বাড়ি একটি খামার থেকে ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমনি একজন হলেন কেরানীগঞ্জের কালিন্দি ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামের পূর্ণলক্ষী সরকার। তিনি স্বামী- সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করত। সে একটি বাড়ি একটি খামার থেকে ৪ বারে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালন করে পরিবারের অভার অনটন দূর করে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছেন। পূর্ণলক্ষী এখন প্রতিমাসে গাভীর দুধ বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। রুহিতপুর ধর্মশুর গ্রামের ফাহিমা আক্তার ৪ বারে ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে হাস-মুরগী পালন করে স্বাবলন্বী হয়েছেন। এখন তিনি সব ঋণ পরিশোধ করে ৫০ হাজার টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছেন। শাক্তা ইউনিয়নের মেকাইল গ্রামের গিতা বাড়ই ও রুহিতপুরের চর ধর্মশুর গ্রামের সালমা বেগম ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী শাক্তা ইউনিয়নের মেকাইল গ্রামের গিতা বাড়ই ঁবাসসকে জানান, তার স্বামী ও ৩ সন্তান নিযে দারিদ্রতার কারণে অর্ধহারে অনাহারে দিনাতিপাত করত। এলাকার ইউপি সদস্যের পরামর্শে শাক্তা ইউনিয়নের মেকাইল গ্রামের একটি বাড়ি একটি খামারের সদস্যভূক্ত হয়। প্রথমে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি বাছুর ক্রয় করে গবাদিপশু পালন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি মোট ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে একটি পূর্ণঙ্গ গবাদি পশুর খামার প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে তার পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসেূ। বর্তমানে তার খামারে ৫টি গাভীসহ ৭টি গরু রয়েছে। যা থেকে তিনি প্রতিদিন ৩০ কেজি করে দুধ পান । প্রতিদিন ৬০ টাকা দরে ১৮০০ টাকার দুধ বিক্রি করেন। গবাদিপশুর খাবার খরচ বাদে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা আয় করেন। গবাদি পশুর পালন করে গীতা বাড়ই এক দিকে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন আপর দিকে দুধ উৎপাদন করে দেশের পুষ্টি চাহিদা পুরনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী ইলোরা ইয়াসমিন বাসসকে বলেন, কেরানীগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আমরা ৪০ জন নারী ও ২০ জন পুরুষের সমন্বয়ে সমিতি গঠন করি ও তাদের সঞ্চয়ে উদ্ভুদ্ধ করি। তাদের সঞ্জয়কৃত টাকার পাশা পাশি পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক সদস্যকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমরা প্রথমে ১০ হাজার টাকা ঋণ দেই। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক সদস্যকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়। এখন সরকার সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ দেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমরা কেরানীগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত ৪৫৭৬ জনকে ঋণ দিয়েছি। এর মধ্যে ২১৩৪ জন সফল খামারি হিসাবে স্বাবলন্বী হয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত ৭ কোটি ৯৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছি এবং ৬ কোটি ৩৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করেছি। উদ্যোক্তাদের সঞ্চয়ের পরিমান ১ কোটি ৬১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।