বাসস বিদেশ-৬ : মার্কিন কংগ্রেসে ২ মুসলিম নারী নির্বাচিত হচ্ছেন

168

বাসস বিদেশ-৬
যুক্তরাষ্ট্র-রাজনীতি-মুসলিম নারী
মার্কিন কংগ্রেসে ২ মুসলিম নারী নির্বাচিত হচ্ছেন
শিকাগো, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস ডেস্ক) : যুক্তরাষ্ট্রে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটাররা দুজন মুসলিম নারীকে নির্বাচিত করতে যাচ্ছে। এমন এক সময় ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটতে চলেছে, যখন দেশটিতে মুসলিম ও অভিবাসন বিরোধী প্রচার প্রচারণা দিন দিনই বাড়ছে। খবর এএফপি’র।
সোমালি শরণার্থী ইলহান ওমরের মার্কিন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ডেমোক্র্যাট এই নেত্রী ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মধ্যপশ্চিম অঙ্গরাজ্য মিনেসোটা থেকে তার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।
ফিলিস্তিন অভিবাসী বাবা-মার সন্তান ডেট্রোয়েটে জন্মগ্রহণকারী রশিদা তাইব একটি হাউসের আসনে বাধাহীনভাবে জয়লাভ করতে যাচ্ছেন। তিনি একজন সমাজ কর্মী।
এই দুজন মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম মুসলিম নারী সদস্য হতে যাচ্ছেন। তাদের নিয়ে কংগ্রেসে মুসলিম সদস্যের মোট সংখ্যা তিন জনে দাঁড়াবে।
মুসলিম আফ্রিকান আমেরিকান কংগ্রেস সদস্য আন্দ্রে কার্সন ডেমোক্র্যাটদের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে সম্ভবত পুনর্নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যখন মুসলিম বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই নির্বাচনী মাইলফলক হতে যাচ্ছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) জানিয়েছে, ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে মুসলিম বিরোধী ঘৃণাজনিত অপরাধ ২১ শতাংশ বেড়েছে।
তাইব ও ওমর দুজনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টির বিরোধী পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
তারা ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরোধিতা করছেন, তারা সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতিকে সমর্থন দিচ্ছেন। রিপাবলিকানরা এই পদ্ধতির বিরোধী।
এছাড়াও তারা অভিবাসন ও সীমান্তে যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে তার বিলুপ্তি চান।
এদিকে ইমিগ্রেশান এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট(আইসিই) দেশব্যাপী অভিবাসন বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। এতে অভিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে দেশ থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে যে মনোনয়ন দেয়া হয় এই দুই নারীর প্রার্থী হওয়া তারই অংশ।
ট্রাম্প আমলে বর্ণ ও নারী অধিকার এবং ক্ষমতায়নের বিষয়টি ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি অন্যতম প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই দুই নারী যেন তারই প্রতিচ্ছবি।
আগামী সপ্তাহের নির্বাচনে কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বহাল থাকার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তাইব ডেট্রোইটে জন্মগ্রহণ করেছেন ও বেড়ে উঠেছেন। তিনি তার বাবা মায়ের ১৪ সন্তানের মধ্যে সবার বড়।
২০০৮ সালে তিনি প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে মিশিগান রাজ্যের আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৪২ বছর বয়সী এই নারী নিজেকে শ্রমিক শ্রেনীর বিজয়ী ও ট্রাম্পের কট্টর বিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডেট্রোয়েটে তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তৃতা দেন।
তাইব আগস্ট মাসে আফ্রিকান আমেরিকান অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রাথমিক নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
ইলহান ওমরের একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। তিনি অবৈতনিক কলেজ শিক্ষা, সবার জন্য বাসস্থান এবং অপরাধী বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের সমর্থক।
হিজাব পরিহিতা মিনেসোটার এই আইনপ্রণেতার ব্যক্তিগত পরিচয় তার নির্বাচনী প্রচারণায় একটি বড় ভূমিকা রাখছে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সোমালি আমেরিকান বিধানসভার সদস্য।
গৃহযুদ্ধের কারণে ইলহান মাত্র আট বছর বয়সে তার পরিবারের সাথে দেশ ত্যাগ করেন। পরে তার পরিবারের সঙ্গে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।
অল্প বয়সে দাদার সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময়ই রাজনীতির প্রতি ইলহানের আগ্রহ জন্মে।
সেপ্টেম্বর মাসে এলে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতির প্রেমে পড়ে গেছি।’
২০১৬ সালে ৩৬ বছর বয়সী এই নারী তার নিজ অঙ্গরাজ্য মিডওয়েস্টার্নের একটি আসনে জয়লাভ করেন। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সোমালী বাস করে।
তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের টিকিটে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীকে সহজেই পরাজিত করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাসস/ কেএআর/১-২০/জুনা