ভোলায় বিনিয়োগে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে

494

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ৩০ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ জেলা ভোলায় বিনিয়োগ বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে এখানে বিনিয়োগ আরো বেগবান হয়েছে। জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ৪টি কূপ থেকে বাপেক্স’র ধারণা মতে প্রায় ৬৭৭ বিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস মজুত রয়েছে। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ৩৯০ বিলিয়ন কিউবিক ফুট যার মধ্যে ৩২.৬০৭০ বিসিএফ মাত্র উত্তোলন করা গেছে। ইতোমধ্যে ভোলা পৌরসভায় গৃহস্থালী কাজের জন্য এখান থেকে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। এই গ্যাসকে কেন্দ্র করে ভোলায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গ্যাসভিত্তিক শিল্পায়নের বিপুল সম্ভাবনা এই জেলায়।
এদিকে গত মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী শ্রী সুরেশ প্রভু ভোলা সফর করে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। যা স্থানীয় বিনিয়োগ বিকাশে আরো গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ব্যাবসায়ী নেতৃবৃন্দ মনে করছেন। এ ছাড়া ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া এলাকায় অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় শিল্প-কারখানা। দেশের বড় বড় শিল্পপতিরা ইতোমধ্যে ভোলায় শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার জন্য একাধিকবার পরিদর্শনে এসেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভেদুরিয়ায় সদ্য আবিস্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রে বাপেক্সর ধারণা মতে প্রায় ৭০০বিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস মজুত রয়েছে। জেলা জুড়ে এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত প্রায় ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস বর্তমান সরকারের উদ্ভাবনী ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার কারণেই ভোলায় প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন ভোলার এই গ্যাস দিয়ে গ্যাসভিত্তিক শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠবে আর বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা সেই সম্ভাবনাকে আরো সুদৃঢ় করবে।
ভোলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল মমিন টুলু বাসস’কে জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের একান্ত প্রচেষ্টায় ভোলায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। এখানকার বিপুল পরিমাণ গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে শিল্পায়ন করা সম্ভব। ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ শুরু করেছেন। ফলে গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে এখানে উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও সমাজসেবক মইনুল হোসেন বিপ্লব মনে করেন, ভোলার অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিলো নদী ভাঙ্গন ও সড়ক পথে বিচ্ছিন্নতা। মহাজোট সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং বিপুল অর্থ ব্যয়ে নদী ভাঙ্গন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গন রোধে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে।
তিনি বলেন, সড়ক পথে ভোলাকে দেশের মূল ভুখন্ডের সাথে সম্পৃক্ত করতে ভোলা-বরিশাল ব্রীজ ণির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এখানে বিনিয়োগের নতুন মাত্রা যোগ হবে। একই সাথে যমুনা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, প্রাণ, বসুন্ধরা, আবুল খায়ের, আরএফএলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিল্প উদ্যোক্তারা ভোলায় শিল্পায়নের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বাসস’কে জানান, ভোলায় প্রচুর গ্যাস মজুত থাকায় ভোলা-বরিশাল ব্রিজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে এই সেতু স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাছাই শেষ হয়েছে। চীনের অর্থায়নে এই সেতুটি নির্মাণ করা হবে। সরকার অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ব্রীজটির কাজ সমাপ্ত করতে চায় বলে মন্ত্রী জানান।
মন্ত্রী আরো জানান, ভোলায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস রয়েছে। সেই গ্যাস দিয়ে অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলাই তার সরকারের লক্ষ্য। ফলে প্রচুর বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সিরামিক ইন্ড্রাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। এখানে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট হয়েছে। আরো গ্যাসভিত্তিক দুটি বিদ্যূৎ কেন্দ্র স্থাপন হবে। একটি দেশী ও অন্যটি বিদেশী কোম্পানী। সব মিলিয়ে ভোলায় শিল্প বিকাশে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।