বাসস দেশ-১ : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা বাড়লো খালেদার

180

বাসস দেশ-১
খালেদা-আপিল-রায়
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা বাড়লো খালেদার
ঢাকা, ৩০ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস): জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদন্ড পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে হাইকোর্ট।
মামলার অপর আসামিদের বিচারিক আদালতে দেয়া ১০ বছর সাজা বহাল রয়েছে। খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে আজ মঙ্গলবার এ রায় দেয় হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ রায় ঘোষণা করে । একইসঙ্গে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির আপিল খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। অপর তিন আসামি পলাতক। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর দুই কারাবন্দি আসামী হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। পলাতক তিনজন হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও তারেক রহমানের ফুফাত ভাই মমিনুর রহমান।
আজ সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে এজলাসে বসেন বিচারকরা। এরপর রায়ের মূল অংশটি পড়ে আদালতের কার্যক্রম শেষ করা হয়। রায় ঘোষণার প্রাক্কালে আদালত বলেন, আমরা রায়ের অপারেটিভ অংশ ঘোষণা করব। রায় ঘোষণায় প্রথমেই খালেদা জিয়ার পক্ষে খালাস চেয়ে করা আবেদন এবং অন্য আসামিদের সাজা কমানোর দুই আবেদন খারিজ করে আদেশ দেয় আদালত। পরে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুদকের করা রিভিশন আবেদন গ্রহণ করে আদালত এই সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদন্ড ঘোষণা করেন।
এসময় আদালতে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে এডভোকেট খুরশীদ আলম খানসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তবে খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
এর আগে গতকাল ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এক আবেদন খারিজ করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ মামলার আপিল নিষ্পত্তির আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ। পরে বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত না থাকায় বাকি আসামিদের পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আদালত এ মামলায় যুক্তিতর্ক সমাপ্ত ঘোষণা করে আজ (মঙ্গলবার) রায়ের দিন ঠিক করে আদেশ দেয়া হয়।
গত ২৩ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন সাজা চেয়ে দুদকের আইনজীবী এবং বিচারিক আদালতের দেয়া পাঁচ বছর সাজা বহাল রাখার আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বক্তব্য পেশ শেষ করে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, কাজী সালিমুল হক কামাল,শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। কারা হেফাজতে বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ মামলায় ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হয়। এরপর ১২ জুলাই হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরু হয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদন্ড স্থগিত করে নথি তলব করে আদালত। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই আপিল আবেদনে তার খালাস চেয়েছেন। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চেয়েছেন । আর রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজাই বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছে।
এ মামলায় বিচারিক আদালতে ২৩৬ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ-জেরা, আসামীপক্ষে সাফাই-সাক্ষ্য এবং ২৮ কার্য দিবস আত্মপক্ষ সমর্থন ও ১৬ কার্য দিবস যুক্তিতর্ক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। অভিযোগপত্রে বেগম খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।
দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল দুটি মামলারই প্রধান আসামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করে দুদক। চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামী হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামীদের সোমবার ৭ বছরের কারাদন্ড দিয়ে রায় দেয় বিচারিক আদালত।
জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিট্যাবল উভয় মামলায়ই ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারিক আদালত।
বাসস/এএসজি/ডিএ/১২৪০/এমএসআই