সুয়ারেজের হ্যাটট্রিকে উড়ে গেল রিয়াল

195

বার্সেলোনা, ২৯ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস) : লুইস সুয়ারেজের হ্যাটট্রিকে মেসি বিহীন মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-১ ড়োলে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। আর হতাশাজনক এই পরাজয়ে রিয়ালের কোচ জুলেন লোপেতেগুইয়ের ভবিষ্যত আরো একবার শঙ্কার মুখে পড়েছে। অন্যদিকে উড়ন্ত এই জয় দিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে কাতালান জায়ান্টরা।
ন্যু ক্যাম্পে পুরো ম্যাচেই বার্সার আধিপত্য বজায় ছিল। বিরতির পর ১৫ মিনিটের জন্য মাদ্রিদ ম্যাচে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিলেও কার্যত তা কাজে আসেনি। লোপেতেগুইয়ের অধীনে তাদের সাম্প্রতীক সব সমস্যাগুলোই যেন কাল আবারো মাঠে ফিরে এসেছিল। বাজে ফিনিশিং, রক্ষনভাগের দূর্বলতা, মূল খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সের ঘাটতি- সর্বোপরী কোন কিছুতেই নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি রিয়াল। যদিও কিছু দূর্ভাগ্যও কাল রিয়ালকে চেপে ধরেছিল। ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকার সময় লুকা মড্রিচের শট পোস্টে লাগে। সুয়ারেজের প্রথম গোলটি ভিডিও এসিসটেন্ট রেফারীর সহায়তায় পাওয়া পেনাল্টি থেকে এসেছিল। ফিলিপ কুটিনহোর শুরু ও আরটুরো ভিডালের শেষ- মাঝে পুরোটা গল্পটাই ছিল সুয়ারেজকে ঘিড়ে। লিওনেল মেসির ইনজুরিতে দলের মূল দায়িত্ব তিনি এভাবেই পালন করেছেন।
ম্যাচ শেষে সুয়ারেজ বলেছেন, ‘বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে দলে পেয়ে আমরা সত্যিই গর্বিত। কিন্তু আমাদের সবসময়ই একটা লক্ষ্য থাকে নিজেদের সেরা দল হিসেবে প্রমান করা। আমাদের দলে একজন অসাধারণ কোচও আছেন।’
লোপেতেগুইয়ের অধীনে রিয়াল গত ৬ ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে। বার্সেলোনার থেকে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে লা লিগার টেবিলে রিয়ালের বর্তমান অবস্থান নবম। রিয়াল মিডফিল্ডার কাসেমিরো বলেছেন, সব মৌসুমে যা হয় আমরা আজও তাই দেখেছি। আমাদের এই অবস্থা থেকে উঠে আসতে হবে, আরো বেশী লড়াই করতে হবে, নিজেদের আরো সঠিকভাবে মেলে ধরতে হবে।
২০১৬ সালে রাফায়েল বেনিতেজের অধীন রিয়াল ৪-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল। আর এই ফলাফলে মাত্র দুই মাসের মেয়াদে বেনিতেজের বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়ত হতে যাচ্ছে লোপেতেগুইয়ের ক্ষেত্রেও।
দীর্ঘ প্রায় ১১ বছরের মধ্যে এই প্রথম এল ক্লাসিকোতে খেলেননি মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। কিন্তু সুয়ারেজের এই অসাধারণ কীর্তি দীর্ঘদিন সকলের মনে গেঁথে থাকবে। বিশেষ করে সুয়ারেজের নিজের মনে। মাত্র পাঁচদিন আগে সন্তানের বাবা হবার মধুর স্মৃতি এখনো তার মন থেকে যায়নি। আর দলে ফিরেই অনবদ্য এই পারফরমেন্সে নিজেকে অত্যন্ত খুশী বলেই দাবী করেছেন উরুগুয়ের এই তারকা।
ম্যাচের ১১ মিনিটে জোর্দি আলবার পাস থেকে কুটিনহো প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। প্রায় ৩০টি পাসের পর এই গোলের দেখা পেয়েছে বার্সা। গত ১৩ মৌসুমে এল ক্লাসিকোতে একটি গোলের আগে এত পাস আগে দেখা যায়নি। টাচলাইনে এই গোরের পর লোপেতেগুইয়ে একেবারে নিস্তদ্ধ হয়ে যান। রিয়ালের খেলোয়াড়রাও বেশ মুষড়ে পড়ে। এরপরপরই আর্থারের একটি শট থিবাট কুর্তোয়াকে প্রায় পরাস্ত করেই ফেলেছিল। ব্যবধান দ্বিগুন করতে অবশ্য বার্সাকে ভিএরআর’র সহায়তা নিতে হয়। সুয়ারেজকে ফাউলের অপরাধে রাফায়েল ভারানের বিপক্ষে পেনাল্টি নির্দেশ দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে ৩০ মিনিটে সুয়ারেজ মৌসুমের সপ্তম গোল পূরণ করেন। কাউন্টার এ্যাটাক থেকে জেরার্ড পিকের হেড অল্পের জন্য গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। বিরতির আগে সফরকারীদের মাত্র দুই গোলে পিছিয়ে থাকাটাই সৌভাগ্যের ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেশীর সমস্যার কারনে ভারানের পরিবর্তে লুকাস ভাসকুয়েজকে নামানো হয়। আর তাকে দলে পেয়ে সফলও হয় রিয়াল। ভাসকুয়েজের বাড়ানো পাস থেকে ইসকোর পা হয়ে দারুন এক ফিনিশিংয়ে ৫০ মিনিটে মার্সেলো এক গোল পরিশোধ করেন। কিন্তু পুরো ম্যাচে রিয়ালের সাফল্য বলতে এই একটাই। এরপর কিছু সময়ের জন্য বার্সা কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিল। রামোসের হেড ক্রসবার দিয়ে বাইরে চলে যায়। মড্রিচের শট পোস্টের ভিতর লেগে ফেরত আসে, ইসকোর শট আটকে দেন মার্ক আন্দ্রে টার-স্টেগান। আক্রমনভাগে নিজেদের এগিয়ে নিলেও রক্ষনভাগে রিয়াল ছিল একেবারে নড়বড়ে। এই সুযোগে সার্জি রবার্তোর চিপে ডি বক্সের ভিতর সুয়ারেজ ৭৫ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করতে ভুল করেননি। ৮৩ মিনিটে আবারো রবার্তোর সহায়তায় সুয়ারেজ হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। এই গোলের পরেই মূলত মাদ্রিদের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ওসমানে ডেম্বেলের ক্রস থেকে ভিডাল ৮৭ মিনিটে পঞ্চম গোলটি করলে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।