ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর

533

ঢাকা, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : দেশের নতুন সার কারখানা ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট (জিপিইউএফপি) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজ একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমির উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে এতে প্রতিদিন ২৮০০ মেট্রিক টন গ্রানুলার ইউরিয়া উৎপাদিত হবে। বছরে এ কারখানা থেকে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার পাওয়া যাবে।
চুক্তিতে বিসিআইসি’র পক্ষে সংস্থার চেয়ারম্যান শাহ্ মোঃ আমিনুল হক এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিত্সুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজিমী নাগানো ও চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নং-৭ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ান দ লিন স্বাক্ষর করেন।
শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, নরসিংদী জেলার পলাশে ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট (জিপিইউএফপি)’ বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে বিদ্যমান ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (ইউএফএফএল) এবং পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডের (পিইউএফএফএল) স্থলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ কারখানা গড়ে তোলা হবে। এটি নির্মাণে জাপানের উন্নত ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এটি হবে একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং পরিবেশবান্ধব সার কারখানা। উৎপাদন ক্ষমতার বিচারে এ কারখানায় উৎপাদন ক্ষমতা হবে বিদ্যমান সার কারখানা দু’টির মোট উৎপাদনের প্রায় তিনগুণ।
দেশের সর্ব বৃহৎ এ কারখানা নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৮৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে। বাকি ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা কমার্শিয়াল লোনের মাধ্যমে সংস্থান করা হবে। বিডার ফাইন্যান্সিং প্রক্রিয়ায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। জাপানের ঐতিহ্যবাহী মিত্সুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এমএইচআই) এবং গণচীনের চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নং-৭ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসি-৭) কনসোর্টিয়াম এ কারখানা নির্মাণ করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এশিয়ার উদীয়মান ব্যাঘ্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বর্তমান সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশ্বখ্যাত উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে। এর ফলে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের নতুন ধারা জোরদার হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আমির হোসেন আমু আরও বলেন, জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু ও উন্নয়ন অংশীদার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে আরও বড় বড় প্রকল্পে জাপানের বিনিয়োগ আসবে। তিনি গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুততার সাথে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শিল্পমন্ত্রী ১৯৪৭ সালের আগে এ অঞ্চলে কোনো সার কারখানা ছিলনা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রথম সার কারখানা স্থাপনের দাবি উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৫৭ সালে সিলেটের ফেঞ্জুগঞ্জে ন্যাচারাল গ্যাস সার কারখানা স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে কারখানার স্থলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শাহ্জালাল সার কারখানা স্থাপন করেছেন। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা বাংলাদেশের জন্য একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব সার কারখানার মডেল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মোঃ নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, বাংলদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান, ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব মোঃ আবদুল হালিম, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমি, বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান শহ্ মোঃ আমিনুল হক, মিত্সুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজিমী নাগানো, চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নং-৭ কন্সট্রাকশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ান দ লিন বক্তব্য রাখেন।