বাজিস-৬ : শেরপুরের তৃণমূলের নারীরা এখন স্বাবলম্বী

139

বাজিস-৬
শেরপুর-স্বাবলম্বী
শেরপুরের তৃণমূলের নারীরা এখন স্বাবলম্বী
শেরপুর, ২২ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : পাঁচ জনের সংসারে দারিদ্র পিছু ছাড়ছিলোনা রওশন আরা বেগমের (৪২)। রিকশাচালক স্বামী অসুস্থতার কারণে কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারের এমন অবস্থায় সংসারে আয়-উপার্জনের কোন কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না রওশন আরা।
তাদের আশার আলো দেখায় ব্র্যাকের অতিদরিদ্র কর্মসূচি। সেখান থেকে ১৮ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা পেয়ে ১৫ হাজার ৫০০ টাকায় তিনি একটি সবজির বাগান করেন। দুই বছরের ব্যবধানে ওই সবজির বাগান থেকে এখন তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা পূজির মালিক হয়েছেন। দু’টি ছাগল কিনে লালন-পালন করছেন। সংসারের অবস্থাও এখন আগের চাইতে কিছুটা ভালো হয়েছে। স্বামীকে চিকিৎসা করে অনেকটা সুস্থ্য করে তুলেছেন। সবজির আবাদ করে লাভের টাকা থেকেই সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন শেরপুরে শ্রীবরদী উপজেলার লংগরপাড়া গ্রামের রওশন আরা বেগম।
প্রায় একযুগ আগে স্বামী হঠাৎ করে উধাও হলে দুই সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়ে শেরপুর সদর উপজেলার চরমুচারিয়া ইউনিয়নের নন্দির বাজার গ্রামের রাজিয়া বেগম (৫২)। দুই সন্তান নিয়ে বাবা ওয়াজি উদ্দিনের বাড়ীতে কোনমতে আশ্রয় নেন। দরিদ্র বাবার পক্ষেও সংসারের বোঝা বহন করা সম্ভব হচ্ছিলো না। বাধ্য হয়ে রাজিয়া এলাকায় শ্রম বিক্রির কাজে যোগ দেন। ২০১৬ সালে ব্র্যাকের অতিদরিদ্র কর্মসূচির আওতায় ১৮ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা পেয়ে একটি বাছুর গাভী কেনেন। সেই গাভী লালন-পালন করে দুই বছরের ব্যবধানে এখন তিনি ৪টি গাভী আর নগদ প্রায় ৩০ হাজার টাকার মালিক হয়েছেন। গাভী লালন-পালন আর গাভীর দুধ বিক্রি করেই চলছে তার সংসার। এভাবে অতিদরিদ্র কর্মসূচির সহায়তা পেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগে জেলার তৃণমুলের অনেক নারীই এখন স্বাবলম্বী হয়েছে।
ব্র্যাক শেরপুর জেলা কার্যালয়ের হিসাব মতে, অতিদরিদ্র কর্মসূচির সহায়তায় ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত জেলায় ৯ হাজার ৬০০ জন অতিদরিদ্র নারী আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং পরিবারে ভুমিকা রাখছেন।
ব্র্যাক শেরপুর জেলা প্রতিনিধি মো. আতাউর রহমান জানান, ব্র্যাক ২০০২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের ৪৭টি দারিদ্র্যপীড়িত জেলার ১৮ লাখের বেশি নারী এবং তাদের পরিবারকে চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করেছে। ২০১৬ সালে ৭৯ হাজার ৪৮০টি চরম দরিদ্র পরিবারকে অতিদরিদ্র কর্মসূচির সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে আরও সাড়ে চার লাখ পরিবারকে সহায়তা করার লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ৪৫টি জেলার ২৩৮টি উপজেলায় মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০টি পরিবারের জন্য অতিদরিদ্র কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে শেরপুর জেলা অন্যতম। ২০১৮ সালে এই জেলার ৫টি উপজেলার ২ হাজার ৩০০টি পরিবারকে অতিদরিদ্র কর্মসূচির সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য নিরসনে সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাক নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এক্ষেত্রে ব্র্যাকের বহুমুখী কর্মকা-ের মধ্যে ‘অতিদরিদ্র কর্মসূচি’ দুই বছর মেয়াদী একটি বিশেষ উদ্যোগ যা ইতিমধ্যে চরম দারিদ্র্য বিমোচনের একটি কার্যকর মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১৫৪৫/মরপা