বাসস ক্রীড়া-১৪ : ইমরুলের সেঞ্চুরি ও সাইফ উদ্দিনের হাফ-সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৭১ রান

167

বাসস ক্রীড়া-১৪
ক্রিকেট-বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে-ওয়ানডে
ইমরুলের সেঞ্চুরি ও সাইফ উদ্দিনের হাফ-সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৭১ রান
ঢাকা, ২১ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস) : ইমরুল কায়েসের ১৪৪ রান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ৫০ রানের সুবাদে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাটিং করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৭১ রান করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিবা-রাত্রির এ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা লিটন দাস ইনিংস শুরু করেন ইমরুল কয়েসকে নিয়ে। দেখেশুনেই শুরুর চেষ্টা করেন দুই ওপেনার। ফলে ৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাড়ায় বিনা উইকেটে ৯ রান। তবে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই জুটি। ২ রানে জীবন পাওয়া লিটন ৪ রান করে ডান-হাতি পেসার তেন্ডাই চাতারার বলে আউট হন।
লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ফজলে রাব্বি মাহমুদ। নিজের অভিষেক ম্যাচটি স্মরনীয় করে রাখতে পারেননি তিনি। ৪ বল মোকাবেলা করে ঐ ওভারের শেষ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শুন্য হাতে ফিরেন ফজলে। বাংলাদেশের ১৫তম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতে শুন্য রানে ফিরলেন ফজলে।
১৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এই অবস্থায় দলকে চিন্তামুক্ত করেন ইমরুল ও মুশফিকুর রহিম। উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তারা। তবে ১৫তম ওভারের শেষ বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মুশফিক। জিম্বাবুয়ের লেগ-স্পিনার ব্রেন্ডন মাভুতার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশি। ১টি চারে ২০ বলে ১৫ রান করেন। ইমরুলের সাথে ৫৪ বলে ৪৯ রান যোগ করেন মুশফিক।
মুশফিক-ইমরুল বড় জুটির আভাস দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ঐ অবস্থায় বড় জুটির খোঁজে ছিলো বাংলাদেশ। কারন বড় ইনিংসের ভিত গড়ার উপযুক্ত সময় ছিলো তখনই। সেটি পূরণের মিশন শুরু করেন ইমরুল ও পাঁচ নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিথুন। শুরুতে রক্ষণাত্মক থাকলেও দ্রুত রান তোলার কাজটা ঠিকই সাড়েন ইমরুল ও মিথুন। বাউন্ডারির চাইতে ওভার বাউন্ডারিতে বেশি স্বাচ্ছেন্দ্যে ছিলেন তারা। তাই এই জুটিতে পাঁচটি ছক্কার বিপরীতে দু’টি চার হাকাঁন ইমরুল ও মিথুন। এরমধ্যে তিনটি ছক্কা ছিলো মিথুনের।
২৬তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজাকে পরপর দু’টি ছক্কা মারেন মিথুন। একই রকম কান্ড ২৩তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে করেছিলেন ইমরুল। জিম্বাবুয়ের মাভুতাকে ব্যাক-টু-ব্যাক ছক্কা মারেন ইমরুল। এর মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরিও তুলে নেন ইমরুল। হাফ-সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন মিথুন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩৭ রানে আউট হন তিনি। জিম্বাবুয়ের ডান-হাতি পেসার কাইল জার্ভিসকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মিথুন। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪০ বলে ৩৭ রান করেন মিথুন। চতুর্থ উইকেটে ইমরুল-মিথুন ৭৪ বলে ৭১ রান এনে দেন দলকে।
মিথুন যখন ফিরেন, তখন বাংলাদেশের স্কোর ২৭ দশমিক ২ ওভারে ১৩৭ রান। এই অবস্থায় চাপ বেড়ে যায় স্বাগতিকদের। কারন মিথুনের বিদায়ের পরপরই ১০ বলের ব্যবধানে ২ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিথুনকে শিকার করা জার্ভিসই বিদায় দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজকে। দু’জনই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। বাংলাদেশের পতন হওয়া ছয় উইকেটের মধ্যে পাঁচটি ক্যাচই নেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক ব্রেন্ডন টেইলর।
১৩৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশের হাল ধরেন ইমরুল ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। জিম্বাবুয়ের বোলারাদের দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। ফলে টাইগারদের রান তোলার গতিও কমে যায়। কিন্তু উইকেটে টিকে থাকাটাই আসল লক্ষ্য স্থির করেছিলেন ইমরুল ও সাইফউদ্দিন। পাশাপাশি সিঙ্গেলসের উপর জোড় দিচ্ছিলেন তারা। এতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান ইমরুল। ২০১৬ সালে ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
৪৩তম ওভারের প্রথম বলে সেঞ্চুরির পর মারমুখী মেজাজ ধারন করেন ইমরুল। সতীর্থকে দেখে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারেননি অন্যপ্রান্তে ৪৯ বলে ২৬ রান করা সাইফ উদ্দিন। জিম্বাবুয়ের বোলারদের বিপক্ষে রানের ফুলঝুড়ি ফুটাতে থাকেন তারা। ইনিংসের ৪৭ ও ৪৮তম ওভারে সমান ১৮ রান করে নেন ইমরুল ও সাইফ উদ্দিন। এরমধ্যে ইমরুল দু’টি ছক্কা ও তিনটি চার মারেন সাইফ।
৪৮তম ওভারেই ১টি করে ছক্কা ও চার মেরে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের দেড়শ রান স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখছিলেন ইমরুল। কিন্তু ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে বিদায় নিতে হয় তাকে । ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১৪০ বলে ১৪৪ রান করেন ইমরুল। এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা রান। সপ্তম উইকেটে সাইফ উদ্দিনের সাথে ১১৫ বলে ১২৭ রান যোগ করেন ইমরুল। বাংলাদেশের পক্ষে সপ্তম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ জুটি ছিলো ১০১ রান। ২০১০ সালে ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিম ও নাইম ইসলাম ১০১ রান করেছিলেন।
ইমরুল ফিরে যাবার পরের বলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাইফউদ্দিন। তবে ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে থেমে যান তিনি। ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ৬৯ বলে ৫০ রান করেন সাইফ উদ্দিন। মাশরাফি ২ ও মুস্তাফিজুর রহমান ১ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৭১ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের জার্ভিস ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ৩৭ রানে ৪ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন দাস ক ঝুয়াও ব চাতারা ৪
ইমরুল কায়েস ক মুর ব জার্ভিস ১৪৪
ফজলে মাহমুদ ক টেইলর ব চাতারা ০
মুশফিকুর রহিম ক টেইলর ব মাভুতা ১৫
মোহাম্মদ মিথুন ক টেইলর ব জার্ভিস ৩৭
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক টেইলর ব জার্ভিস ০
মেহেদি হাসান ক টেইলর ব জার্ভিস ১
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ক মাভুতা ব চাতারা ৫০
মাশরাফি বিন মর্তুজা অপরাজিত ২
মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-১, নো-১, ও-১৪) ১৭
মোট : (৮ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৭১
উইকেট পতন : ১/১৬ (লিটন), ২/১৭ (ফজলে), ৩/৬৬ (মুশফিকুর), ৪/১৩৭ (মিথুন), ৫/১৩৭ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১৩৯ (মেহেদি), ৭/২৬৬ (ইমরুল), ৮/২৬৭ (সাইফ উদ্দিন)।
জিম্বাবুয়ে বোলিং :
জার্ভিস : ৯-১-৩৭-৪ (ও-২),
চাতারা : ১০-১-৫৫-৩ (ও-৪, নো-১),
তিরিপানো : ১০-০-৬০-০ (ও-৩),
মাভুতা : ৮-০-৪৮-১ (ও-২),
রাজা : ৬-০-৩৭-০ (ও-২),
উইলিয়ামস : ৭-০-৩২-০ (ও-৩)।
বাসস/এএসজি/এএমটি/১৮৩৫/মোজা/স্বব