নওগাঁ’র আত্রাইয়ে হাতের কাজ করে সোনালী উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়তে চান স্কুল শিক্ষক শামীমা

390

নওগাঁ, ৮ মে ২০১৮ (বাসস) : জেলার আত্রাই উপজেলা সদরে হাতের কাজ করে খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সফলতা লাভ করেছেন এক স্কুল লিক্ষক। মাত্র ১০ হাজার টাকায় শুরু করে এখন তাঁর নীট পুঁজি কয়েক লাখ টাকা। তাঁর এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কমপক্ষে ৫০ জন দরিদ্র মহিলার কর্মসংস্থান হয়েছে। তাঁরা প্রতি মাসে কমপক্ষে আয় করছেন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
আত্রাই উপজেলার খনজোড় জয়সারা উচ্চ বিদ্যালয়ের গনিত বিভাগে শিক্ষক মোছাঃ শামীমা আখতার। পিতার চাকুরীর সুবাদে নাটোর দয়ারামপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, বগুড়া আজিজুল হক কলেজে অনার্স এবং ঢাকা তিতুমীর কলেজ থেকে মাষ্টার্স করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের প্রতি তাঁর ঝোক। তাঁর এ ঝোঁকের কারণে প্রথমে একা একা শিখেছেন। পরবর্তীতে দয়ারামপুর ক্যান্টনমেন্ট-এ সেনাকল্যাণ সংস্থায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন।
সেই শখ এখন পেশায় পরিণত হয়েছে। একটি সোনালী আগামীর স্বপ্ন দেখছেন এখান তিনি। আত্রাই উপজেলা সদরে একটি বাড়ি ভাড়া করে সেখানে “ইশানস ষ্টুডিও ও বুটিকস কালেকশন” নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেখানে ওয়ান পিস, ক্যামিজ, থ্রি-পিস, ওড়না, মেয়ে শিশুদের পোশাক ইত্যাদিতে মনোলোভা ডিজাইনের সেলাই করে থাকেন। সূচ সুতার অপূর্ব সমন্বয়ে সেগুলো ক্রেতাদের নিকট হয়ে উঠে আকর্ষণীয়। এছাড়াও সেখানে কাঁথা ষ্ট্রিচ, গুজরাটি ষ্ট্রিচ, যশোরী ষ্ট্রিচ, এ্যামব্রয়ডারী এবং ডলারের কাজ করা হয়। এ ছাড়াও ঈদের সময় বিশেষভাবে ছেলেদের পাঞ্জাবী ফতোয়া তৈরি করা হয়।
এগুলো তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। হাতের কাজগু রচিশীল এবং মনোলোভা হওয়ায় এলাকার অভিজাত শ্রেণীর ক্রেতারা নিয়মিত সেখান থেকে তাঁদের পছন্দের দ্রব্যটি কিনেন।
ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কমপক্ষে ৫০ জন দরিদ্র মহিলা। সংসারের কাজের পাশাপাশি তাঁরা এখানে কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। তাঁদের মধ্যে শাবানা খাতুন ও শিউলী জানান তাঁরা এখানে সেলাইয়ের কাজ করেন। প্রতিষ্ঠান থেকে যে ডিজাইন দেয়া হয় তাঁরা তাতে সুচ সুতা দিয়ে সেলাইয়ের কাজ করেন। এ কাজে তাঁরা মাসে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা আয় করেন। এতে তাদের সংসারে কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা এসেছে।
ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন এলাকার আরেক গৃহবধূ মাকসুদা সুলতানা। তিনি ঐসব পোশাকে বিভিন্ন ডিজাইন এঁকে দেন। তিনি জানান এ কাজ করে তিনিও মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন আত্রাই থানার অফিসার্স উনচার্জ মোঃ মোবারক হোসেন। তিনি বলেছেন এখানে বিশেষ করে শিশু ও মেয়েদের আধুনিক ডিজাউনের রুচি সম্মত পোশাক পাওয়া যায়। তাই তিনি তাঁর পরিবারের জন্য বিভিন্ন পোশাক ক্রয় করেন।
আত্রাই উপজেলার যুব উন্নয় অফিসার মোঃ ফজলুল হক এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। এখানকার পোশাকসহ নানা ব্যবহার্য দ্রব্যাদির সুখ্যাতির কথা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেছেন এখানকার উদ্যোক্তাসহ কর্মীদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে আরও সমৃদ্ধ করা তাঁর দপ্তরের সুযোগ রয়েছে। তিনি সে উদ্যোগ নিবেন এবং প্রশিক্ষণের পর প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থাও করবেন বলে তিনি জানান।