বাজিস-৪ : পটুয়াখালী ও বরগুনায় তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র : বাসস্থান, চিকিৎসা সুবিধাসহ বিদ্যুত বিক্রির লভ্যাংশও পাবেন স্থানীয়রা

147

বাজিস-৪
পটুয়াখালী-বরগুনায়-তাপ বিদ্যুত
পটুয়াখালী ও বরগুনায় তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র : বাসস্থান, চিকিৎসা সুবিধাসহ বিদ্যুত বিক্রির লভ্যাংশও পাবেন স্থানীয়রা
বরগুনা, ২১ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : বাসা বা বাড়ি যাই বলা হোক সবগুলোই এল টাইপের। দক্ষিণমুখো। এই বাড়ির প্রত্যেকটিতে ১৫ দশমিক সাত ফুট দীর্ঘ বাথরুমসহ একটি মাস্টার বেডরুম ছাড়াও আরও দুইটি ১৫ ফুট দৈর্ঘের বেডরুম রয়েছে। ১০ দশমিক চার ফুট সাইজের একটি ডাইনিংরুম। ১২ দশমিক দুই ফুটের রান্নাঘর। এছাড়া একটি কমন বাথরুম রয়েছে। সামনের বারান্দাটি লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুত সুবিধা থাকছে। প্রত্যেকটি বাড়ির সামনে একটি খালি জায়গা থাকছে যেখানে শাক-সবজির আবাদ কিংবা গবাদিপশুসহ হাঁস-মুরগী পালনের সুযোগ থাকছে।
পল্লীর মধ্যে ৩৬ হাজার ৯২৯ এবং ২৪ হাজার ৫৫৪ বর্গফুট আয়তনের দুটি পুকুর খনন করা হয়েছে। যার উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত ঘাটলা করা হয়েছে। ঘটলার পাশে বসার বেঞ্চ। এই পল্লীতে নিরাপদ পানির জন্য ৪৮টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। ২৩ শতক জমিতে আধুনিক দ্বিতল মসজিদের কাজ শেষ পর্যায়ে। দ্বিতল কমিউনিটি সেন্টারের কাজ স¤পন্ন হয়েছে। এর নিচতলায় থাকছে ক্লিনিক। ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের এই কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে খেলার মাঠ। চারটি দোকান করার মতো ¯েপস নিয়ে একটি শপিং সেন্টার করা হয়েছে। রয়েছে ঈদগাহ মাঠ। একটি স্কুল ভবন করা হয়েছে। যেখানে টেকনিক্যাল শাখার অগ্রাধিকার থাকছে। ভেতরের পানি নিষ্কাশনের সাড়ে চার কিমি ড্রেনসহ ভেতরের ১২ ফুট প্রস্থ দুই দশমিক সড়ক করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট কবরস্থান করা হয়েছে।
রাজধানী বা দেশের অন্য বড় কোন শহরের আধুনিক সুবিধা সংবলিত আবাসিক পল্লীর বিবরণ নয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার অতি সাধারণ মানুষের জন্য তৈরী আবাসস্থলের বর্ননা এটি। দূর থেকে দেখা এই পল্লী এখন নজর কাড়ে অন্যদেরও। এ বাড়িগুলো দেয়া হবে একেবারেই বিনামূল্যে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য এক হাজার একর অধিগ্রহণকৃত জমির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০ পরিবার এখন এই পুনর্বাসন পল্লীতে বসবাসের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার ২০১৬ সাল থেকে বাড়িঘর ছেড়ে শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনেছেন সেমিপাকা আধুনিক সুবিধা সংবলিত বাড়িগুলো বুঝে নেয়ার জন্য। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনডিএ সূত্রে জানা গেছে, অল্প দিনের মধ্যে এই পুনর্বাসন পল্লীর নির্মাণ কাজ স¤পন্ন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
অন্যদিকে বরগুনার তালতলীতে শুধু বিদ্যুৎ প্ল্যান্টই নয়, সেখানে কর্মরতদের ও স্থানীয়দের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল হবে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির করা হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে সাড়ে তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। জানিয়েছেন, ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষম নির্মাণাধীন তাপবিদ্যুত প্রকল্পটির কর্ণধার প্রতিষ্ঠান আইসোটেক গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ আহমেদ চৌধুরী।
তিনি আরও জানান, পরিবেশ রক্ষায় সবধরনের ব্যবস্থা নিয়ে, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এই বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরী করা হচ্ছে। বর্তমানে চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প এলাকার অধিবাসীদের দেয়া হচ্ছে ক্ষতিপূরণ।
ধানখালীতে ১৬ একর জমির ওপর এই পুনর্বাসন পল্লীর ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ। দু’টি ডিজাইনে করা হয়েছে এই সেমিপাকা বাড়িগুলো। যেসব পরিবারের ২০ শতকের বেশি জমির বসতি নষ্ট হয়েছে তাদের জন্য সাড়ে সাত শতক জমিতে ১২শ’ বর্গফুট আয়তনের ৮২টি এবং যাদের কম ক্ষতি হয়েছে তাদের জন্য সাড়ে পাঁচ শতক জমিতে এক হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪৮টি বাড়ি/ঘর করা হয়েছে।
নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কো¤পানিসূত্রে জানা গেছে, এখান থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুত বিক্রি থেকে দশমিক তিন পয়সা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জীবনমানের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তানভীর রহমান জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের যথাযথভাবে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগামী ২৭ অক্টোবর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ি বুঝিয়ে দেয়া হবে।’
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকার বরগুনার তালতলীতেও তাপ বিদ্যুত প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কলাপাড়ার পুনর্বাসনের পদ্ধতি ও বাস্তবায়ন তালতলীর জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্বস্ত করবে।
বাসস/সংবাদদাতা/১৬১১/মরপা