বাজিস-৩ : ভোলায় একটি বাড়ি একটি খামারে ৫৮ হাজার পবিারের ভাগ্য বদল

159

বাজিস-৩
ভোলা-একটি বাড়ি একটি খামার
ভোলায় একটি বাড়ি একটি খামারে ৫৮ হাজার পবিারের ভাগ্য বদল
॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে ভোলার প্রায় ৫৮ হাজার পরিবারের ভাগ্য বদল হয়েছে। সরকারের সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার আমূল পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবারগুলো নিয়মিত সঞ্চয় প্রদান ও ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে এখন স্বাবলম্বী। বাড়িগুলো মাছ, হাঁস, মুরগী, কবুতর ও ছাগল পালন, সবজি চাষের মাধ্যমে আদর্শ খামারে রূপ লাভ করেছে। মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে এ প্রকল্পে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত এ উদ্যোগ জেলার গ্রামগুলো স্বনির্ভর করেছে। অসহায় মানুষকে ঘুড়ে দাড়াতে শিখিয়েছে। দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছল ও উন্নত জীবন যাপন করছেন পল্লী অঞ্চলের মানুষ। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল বাসস’কে বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’র মাধ্যমে গ্রামীণ দারিদ্র্য দূর করা গেছে। এটি মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্পনা-প্রসূত সামাজিক কর্মসূচি। যার মাধ্যমে সাড়া দিয়ে পল্লী অঞ্চলের নারী-পুরুষ তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে নারীরা তাদের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন পরিবারে। তাই ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যান্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে বলে মনে করেন এমপি মুকুল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় জেলার ৭টি উপজেলায় ৬৮টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৯৯ টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক গ্রামে ৬০ জন সদস্য নিয়ে একটি অথবা একাধিক সমিতি করা হয়। এর মধ্যে পুরুষ ২০ জন ও নারী সদস্য ৪০ জন রয়েছেন। এখানকার মোট প্রায় ১২’শ সমিতিতে ২০ হাজার পুরুষ ও ৩৮ হাজার মহিলা সদস্য রয়েছেন।
কথা হয় উপজেলা সদরের আলীনগর ইউনিয়নের পূর্ব রহিতা গ্রাম উন্নয়ন দলের সদস্য রঞ্জিতা রানীর সাথে। স্বামীর মৃত্যুর পর একসময় অনেক অর্থকষ্টে থাকলেও আজ সে স্বনির্ভর। হোগলা পাতার পাটি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। ২০১৬ সালে সে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সমিতির সদস্য হওয়ার পর থেকেই বদলাতে থাকে তার অবস্থা। তিনি জানান, প্রথম ২ বছর কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তার। প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা ঋন নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় হোগলা বোনন শুরু করেন। এখন ২ ছেলে ও বৃদ্ধ শশুরকে নিয়ে ভালো আছেন তিনি।
বিআরডিবি’র কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প শুরু থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সদস্যের মাঝে মোট প্রায় ৬০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয় আদায় হয়েছে ২২ কোটি ৪ লাখ টাকা। একজন সদস্যের মাঝে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করে নাম মাত্র সুদে এ ঋণ সহায়তা দেয়া হয়। আর এ অর্থ দিয়েই প্রকল্পের সদস্যরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। দরিদ্র মানুষের মনের হতাশা দূরিভূত হয়ে আশার সঞ্চার হচ্ছে একটি বাড়ি একটি খামারে।
শীবপুরের ইউনিয়নের দক্ষিণ রতনপুর গ্রাম উন্নয়ন দলের সদস্য মো: নূরে আলম ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। তিনি গরু মোটা-তাজাকরণ করে এখন ভালো আছেন। একই সমিতির সদস্য খোকন মাতাব্বর পোল্ট্রি ফার্ম দিয়ে ঘুড়ে দাড়িয়েছেন। পশ্চিম শিবপুর গ্রাম উন্নয়ন দলের মো: মাইনুদ্দিন মৎস্য ও ঁেপপের চাষে সফলতা অর্জন করেছেন। তারা বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার তাদের জীবন বদলে দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
একই ইউনিয়নের মো: খোকন, মাসুদুর রহমান, ইছুব আলী, মফিজুল ইসলাম, রাবেয়া বেগম, নুরনাহার বেগমসহ আরো বহু নারী-পুরুষ তাদের নিজেদের ভাগ্য বদলেছেন এ প্রকল্পের মাধ্যমে। কেউ পুকুরে তেলাপিয়া, রুই, কাতল ও পুটির চাষ করেন। কেউ মুরগি, হাঁস, গরু ছাগল পালন করছেন। আবার অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে অবস্থা বদলেছেন।
বাপ্তা ইউনিয়নের সবুজ বাকলাই একটি বাড়ি একটি খামার থেকে ঋণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন আদর্শ খামার। তার খামারে মাছ, গরু, সবজি, ফলজ গাছ রয়েছে। বছরে তার খামার থেকে লাখ টাকারও বেশি আয় হয়। তিনি তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিআরডিবি’র উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) মো: কাওসার হোসেন বাসস’কে বলেন, এ প্রকল্পে সদস্যরা একদিকে সঞ্চয় করছে, অন্যদিকে সমিতির ঋণ দিয়ে আয়বর্ধক কাজে ব্যবহার করে জীবিকা নিশ্চিত করছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও লাগসই এবং স্থায়ী দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে সার্বিক উন্নয়নে নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করছে।
বাসস/এইচ এ এম/কেইউ/১৩৪০/নূসী