খসড়া সম্প্রচার আইন-২০১৮ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

1109

ঢাকা, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : মন্ত্রিসভা আজ নীতিগতভাবে খসড়া সম্প্রচার আইন-২০১৮ অনুমোদন করেছে। একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনাই এই আইনের লক্ষ্য।
আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘প্রধানতঃ এই আইন প্রণয়নের লক্ষ্য হচ্ছে সম্প্রচার শৃঙ্খলা আনা।’
তিনি বলেন, সম্প্রচারের জন্য লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে এবং এজন্য একটি কমিশন থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিকৃত মানসিকতা ও দেউলিয়াত্বের কারণে আদালত কর্তৃক সম্প্রচার চালানোর ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা সত্ত্বেও কেউ সম্প্রচার অব্যাহত রাখলে সেই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদন্ড অথবা পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হবে।
শফিউল আলম বলেন, এছাড়া মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে ‘দি মাস মিডিয়া এমপ্লোইজ (সার্ভিস কন্ডিশন) ল’ ২০১৮ অনুমোদন করেছে। এতে টেলিভিশন চ্যানেলসহ সকল গণমাধ্যম কর্মীর জন্য ওয়েজ বোর্ডের নিশ্চয়তার বিধান রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, কাউকে অযোগ্য ঘোষণার পরও যদি কেউ সম্প্রচার অব্যাহত রাখে, তবে তাকে প্রতিদিনের জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা প্রদানের বিধান প্রস্তাবিত সম্প্রচার আইনে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে ৭ সদস্যের একটি সম্প্রচার কমিশন গঠন এবং এই কমিশন গঠনে সদস্যদের নিয়োগ দিতে একটি সার্স কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সার্স কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি একজন চেয়ারম্যান এবং একজন নারী সদস্যসহ ছয় সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলম কমিশনের কাজ সম্পর্কে বলেন, কমিশন সম্প্রচারের মান দক্ষতা অক্ষুন্ন ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে সম্প্রচার শিল্পে গতিশীলতা আনতে কোন ব্যক্তিবর্গ অথবা কোন সংস্থার নামে লাইসেন্স প্রদান করবে। তিনি আরো বলেন, কমিশন সম্প্রচার লাইসেন্স দেয়ার পাশাপাশি সম্প্রচার যন্ত্রপাতিরও লাইসেন্স প্রদান করবে এবং এ ক্ষেত্রে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে যে কোন লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে কমিশনকে সরকারের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক অনুমতি নিতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কমিশনের অনুমতি ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর হলে এটি বাতিল বলে গণ্য হবে। কোন ধংসাত্মক এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য, ছবি, ভিডিও অথবা অন্য যে কোন বিষয় সম্প্রচার অথবা উপস্থাপন এবং সরকারের জরুরি কোন বার্তা সম্প্রচার না করলে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড অথবা পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সম্প্রচার আইন-২০১৮ একটি নতুন আইন। সব উদ্যোক্তাদের সাথে আলাপ-আলোচনার পর এটি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যমসহ সম্প্রচার মাধ্যমে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে আইনটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, আইন অনুসারে কমিশন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আনীত যেকোন অভিযোগ গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে।
সাত ধরনের অযোগ্যতার কারণে কমিশনের যেকোন সম্প্রচার মাধ্যমের নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করার ক্ষমতা থাকবে।
গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন ২০১৮ সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন অনুসারে টেলিভিশন চ্যানেলসহ সকল গণমাধ্যমের কর্মীদের জন্য ওয়েজবোর্ড কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুসারে গণমাধ্যম কর্মীদের কর্মঘন্টা ৪৮ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘন্টা করা হয়েছে। অন্যদিকে, বার্ষিক নৈমিত্তিক ছুটি ১০ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন এবং অর্জিত ছুটি ৬০ দিনের পরিবর্তে ১০০ দিন হবে।
শফিউল আলম বলেন, পাশাপাশি বাৎসরিক উৎসব ছুটি হবে ১০ দিন এবং তিনবছর পরপর সংবাদ কর্মীরা একমাস বিনোদন ছুটি পাবেন। এছাড়াও মাতৃত্বকালীন ছুটি আট সপ্তাহের জায়গায় ছয়মাস হবে।
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই আইনের বিধান ভঙ্গ করলে, তাকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
মন্ত্রিপরষিদ সচিব বলেন, এছাড়াও মন্ত্রিসভা ‘দি ক্যস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টস ল, ২০১৮’ এবং ‘বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল ল ২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দি ন্যাশনাল ইনোভেশন এ্যান্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি পলিসি ২০১৮’-এর খসড়া আজ মন্ত্রিসভার অনুমোদন করেছে।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে সংস্কৃতি ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি চুক্তি অনুমোদন করেছে।
শফিউল আলম বলেন, মন্ত্রিসভা ৬ অক্টোবরকে জাতীয় জন্মনিবন্ধন দিবস হিসাবে ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন এবং দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘খ’ ক্রমে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন করে।
তিনি জানান, মন্ত্রিসভা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনা অভিযানে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পুরস্কৃত সেনাসদস্যদের ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবও অনুমোদন করে।