বাজিস-৩ : বরগুনার ১১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক তৃণমূল মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে

190

বাজিস-৩
বরগুনা-কমিউনিটি ক্লিনিক
বরগুনার ১১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক তৃণমূল মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে
বরগুনা, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে প্রসূতি সেবা কেন্দ্রও চালু রয়েছে। সেখানে প্রসূতি মায়েদের নিরাপদ প্রসবসহ মা ও শিশুদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্যে নিভৃত গ্রামাঞ্চলে গড়ে তোলা বরগুনার ১১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর চালু হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। বিপত্তি ঘটে ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসায়। তারা ক্ষমতায় এসেই কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম স্থবির করে ব্লাক-বেঙ্গল ছাগল পালনের উপর জোর দেয়। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে সেই ছাগল পালন হতো কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে পুনরায় কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের হাল ধরে। সেই সুবাদে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান হয় এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের লোকজনের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিটি ক্লিনিক সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহে ছয়দিন বসেন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) এবং তিনদিন করে বসেন একজন স্বাস্থ্য সহকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা ছাড়াও ইপিআই কর্মসূচির সকল কার্যক্রম এসব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বাস্তবায়ন করা হয়।
গ্রামাঞ্চলে প্রতি ছয় হাজার লোকের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক। এ নীতিমালা অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের আওতায় বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ১১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ১১৬টি ক্লিনিকের মধ্যে অধিকাংশ ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াও সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটিতে ল্যাপটপ কম্পিউটার প্রদান করে দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগে রিপোর্ট আদান প্রদান করা হচ্ছে।
বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের কাঠালতলী কমিউনিটি ক্লিনিকে নারী ও শিশুসহ প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৪০ জন রোগী আসছেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে। চিকিৎসা সেবাসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেন এই ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মো. রিয়াজুল কবীর এবং কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মোসা. নুসরাত জাহান। এ কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী এবং কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়দের সহযোগিতায় সম্প্রতি সেখানে খোলা হয়েছে প্রসূতি সেবা কেন্দ্র। মাসে গড়ে পাঁচ-সাতজন প্রসূতি মা এখানে স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি পরামর্শ ও নিরাপদ প্রসূতি সেবা নিচ্ছেন।
ঢলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল হক স্বপন জানান, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন একটি মহতী উদ্যোগ। তার ইউনিয়নে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এলাকার মানুষ বিনা টাকায় হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন।
আমতলী উপজেলার কলঙ্ক গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং বামনা উপজেলার ছোট ভাইজোড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএইচসিপিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় সবসময়ই সেখানে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ফলে সরকারিভাবে ওষুধের বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।
বরগুনার জেলা সিভিল সার্জন ডা. হুমাযুন শাহীন খান জানান, জেলায় ১১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সবগুলো চালু রয়েছে। তৃণমূলের মানুষ এসব ক্লিনিক থেকে সেবা পাচ্ছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্লিনিকগুলোকে আরও সক্ষম করে তুলতে পারলে সারাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় নতুন এক দিগন্তের উন্মোচন ঘটবে। বেশ কিছু ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওষুধের অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়েছেন তিনি।
বরগুনার সাবেক সাংসদ ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়াম্যান দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে এ দেশে যেভাবে মানুষ বিনা পয়সায় সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশেই তা নেই। অবস্থাপন্ন মানুষেরা অর্থ খরচ এসব সেবা নিতে পারলেও গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে সরকারি এ সেবাগুলো যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা তৃণমূল পর্যায়ে বসবাসরত মানুষমাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন। বিশেষ করে চিকিৎসা খাতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গ্রামের মানুষদের ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে।
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১১৩০/নূসী