তিন দেশ সফরে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

730

ঢাকা, ২ মে, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক তিন দেশ সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছেন, এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
তিনি আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমার সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস- এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সময়ে তিন দেশ সফরের সাফল্য গণমাধ্যমে তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান-বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ-এর আমন্ত্রণে ১৫ এপ্রিল সৌদি আরবের দাম্মাম সফর করেন। এখানে তিনি পূর্বাঞ্চলীয় আল-জুবাইল প্রদেশে অনুষ্ঠিত যৌথ সামরিক মহড়া ‘গাল্ফ শিল্ড-১’-এর সমাপনী অনুষ্ঠান ও কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।
তিনি বলেন, এই মহড়ায় ১৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত যৌথ সামরিক মহড়ায় ২৩টি দেশ যোগ দেয়।
তিনি বলেন, এ সময় তিনিসহ অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সৌদি বাদশাহ অভ্যর্থনা জানান।
তিনি বলেন, আমি সৌদি বাদশাহ ও অন্যান্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করি।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠক-২০১৮-এ যোগ দিতে ৬ দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্য যান।
তিনি বলেন, কমনওয়েলথ সম্মেলনে ৪টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে : সকলের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ, একটি অধিক টেকসই ভবিষ্যৎ, একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ ও একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ।
তিনি আরো বলেন, এই ৪টি এজেন্ডা ছাড়াও গণতন্ত্রের বিকাশ, মানবাধিকার এবং সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে আইনের শাসন জোরদার করাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জন্য এ বছরের সম্মেলন ছিল আন্তর্জাতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে বেক্সিটের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের বিরোধিতা।
শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজনে প্রযুক্তি হস্তান্তর, জলবায়ু পরিবর্তনে অর্থায়ন ও অগ্রাধিকারভিত্তিক খাতগুলোতে সহিষ্ণু ও সক্ষমতার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন।
এছাড়া, তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের দায়-দায়িত্ব, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অভিবাসন সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ব্রিটেনের রাণীর সম্মানে রয়েল সোসাইট কর্তৃক উৎসর্গকৃত কুইন্স কমনওয়েলথ ক্যানোপি (কিউসিসি) প্রকল্প ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ক্ষুদ্র ও সংরক্ষিত ‘শালবন’কে সংযুক্ত করার ঘোষণা দেন।
এছাড়া, তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সফলতা বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি কমনওয়েলথকে আরো কার্যকর এবং উন্নয়নমুখী একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে এর পুনর্গঠন ও সংস্কারের ব্যাপারে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের মনোযোগ আকর্ষণ করি।
তিনি কমনওয়েলথ সম্মেলন-২০১৮তে গৃহীত ব্লু ইকোনোমি সংক্রান্ত কমনয়েলথ ব্লু চার্টার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্লু চ্যাম্পিয়নে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কমনওয়েলথ নারী ফোরামে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন, সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন, উন্নয়নে নারীর ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জন ও দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের কমনওয়েলথ ইশতেহারে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে প্রশংসার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ ও তা নিরসনে কফি আনান কমিশনের সুপারিশের বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মতবিনিময় এবং ব্রিটেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
এসব বৈঠকে কমনয়েলথ নেতৃবৃন্দ ধৈর্য্যসহকারে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় তাঁর সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং এ সমস্যা সমাধানে জোরালো সমর্থনের আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের আমন্ত্রণে বিশ্ব নারী সম্মেলনে যোগ দিতে ২৬ থেকে ২৮ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া সফর করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২৭ এপ্রিল সিডনিতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসি) অনুষ্ঠিত নৈশভোজের এক অনুষ্ঠানে গ্লোবাল ওমেন লীডারশীপ এওয়ার্ড-২০১৮ গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও এশীয়- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষার বিস্তার এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে তার নেতৃত্বের জন্য গ্লোবাল ওমেন সামিট তাকে এই এওয়ার্ড প্রদান করে।
অনুষ্ঠানে গ্লোবাল ওমেন সামিটের প্রেসিডেন্ট আইরীন নাতিভিদাদ প্রায় এক হাজার নারী নেত্রীর উপস্থিতিতে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।
শেখ হাসিনা এওয়াড গ্রহণ করে বলেন, নারী নেত্রীরা এ সময় মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। আইরীন নাতিভিদাদ নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তি চালু এবং জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠানে আইরীন বলেন, বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্ব নেতারা এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অনুষ্ঠানে তিনি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীর ক্ষমতায়নে একটি নতুন বিশ্ব জোট গঠনের আহবান জানান। তিনি এই এওয়ার্ড বিশ্বের সমগ্র নারী জাতিকে উৎসর্গ করেন। শীর্ষ সম্মেলনে তিনি নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সম্মেলনে বিশ্বে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি শনিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শেখ হাসিনা শনিবার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং সিডনিতে সোফিটেল হোটেলে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এই সংকট মোকাবেলা করার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভিয়েতনামের ভাইস প্রেসিডেন্ট দং থাই নোক থিন এবং অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ আন্তর্জাতিক সিডনি হোটেলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর দু’দেশের অভিন্ন অবস্থান নির্ভর করছে এবং অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর সফর দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।