বরগুনায় এখনো মাছের প্রাচুর্যতা রয়েছে

259

॥ খায়রুল বাশার বুলবুল ॥
বরগুনা, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : বরগুনার প্রতিটি বাজারে এখন নানা সাইজের ইলিশের সমারোহ। সেই সাথে রয়েছে, রুই, কাতলা, বিগহেড, তেলাপিয়া, মিররকার্প, সিলভারকার্প, গ্রাসকার্পসহ নানান জাতের মাছ। পাওয়া যাচ্ছে শোল, গজার, টাকি, বাইন, শিং, মাগুর, কই, ভেদি, নানা প্রকার দেশিয় জাতের মাছ। বরগুনা জেলার খাল-বিল, জলাশয়ে স্থানীয় ভাবে মাছের ব্যাপক চাষাবাদ এবং বঙ্গোপসাগর ও পায়রা এবং বিষখালী নদী থেকে আহরণ করা মাছে বরিশাল বিভাগে এ জেলা এখনও প্রাচুর্যতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দুই দশক আগেও নদীসহ জলাশয়গুলো দেশীয় প্রজাতির মাছে ভরপুর ছিল। কালের আবর্তে নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চাষাবাদে কীটনাশক ব্যবহার, কারেন্ট জালসহ নানা অবৈধ জালের ব্যবহারে রেনু-পোনা ধ্বংস, নির্বিচারে ডিমওয়ালা মা মাছ নিধন করায় মাছের স্বাভাবিক বংশ বিস্তার অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে শঙ্ক, রিঠে, কাজলি, সরপুটি, পাবদা, বেশ কয়েকটি জাতের মিঠা পানির সুস্বাদু মাছ কমলেও এ সংকট কাটাতে, প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা মেটাতে এবং বাণিজ্যিক আয়ের জন্য বরগুনা জেলায় ব্যাপকহারে মাছের চাষ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পুকুরে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে এবং বদ্ধ জলাশয়, খাল কিংবা উন্মুক্ত নদীতে খাঁচায় ব্যাপক হারে মাছের চাষ চলছে বলে জানালেন আমতলী উপজেলার সংবাদকর্মী ও মৎস্য খামারি হারুন অর রশিদ।
চাষের মাছ নামে খ্যাত এই প্রজাতিরগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মনোসেক্স তেলাপিয়া, কই, মাগুর, পাংগাস, বিগহেড, গ্রাসকার্প, মিররকার্ড, ব্লাডকার্প, গদলা চিংড়ি, রুই, কাতলা প্রভৃতি। চাষের এই মাছগুলো তুলনামূলকভাবে দামেও সস্তা বলে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে বলে স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতারা আলাপকালে জানিয়েছেন।
স্থানীয় মানুষের মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ায় সরকারী মৎস্য দপ্তরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংস্থাও অর্থনৈতিক, কারিগরী ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে বলে ওয়ার্ল্ড ফিস সেন্টারের সাবেক টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট মো. শফিউল্লাহ জানান।
কয়েক বছর আগে বরগুনার ঘটখালী ও চলাভাঙ্গা নামের দুটি গ্রামে স্থানীয় মৎস্যচাষীদের পরিচালিত ‘সুপার সেনসেটিভ ফিস কালচার’ পরিদর্শন করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ও দাতা সংস্থা ইউএসএইড এর মিশন পরিচালক মিস জেনিনা জেরুজেলস্কি। তারা চাষীদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
শুধু চাহিদা মেটানো নয় বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সহ¯্রাধিক মৎস্যজীবি সমিতির মাধ্যমে গলদা চিংড়ি, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন সাদা মাষের চাষ চলছে বরগুনার প্রতিটি গ্রামে। সামুদ্রিক মাছ আহরণে কাজ করছেন ৪৫ হাজারের বেশী জেলে। প্রতি বছর কয়েকশ কোটি টাকার মাছ এই জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয় বলে জানালেন জেলা মৎস্যজীবী সমিতি, জেলা ট্রলারমালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত উপকূলের বিভিন্ন নদী ও সাগর মোহনায় গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেনু শিকার করা হয় মশারির জালের মাধ্যমে। এ সময়ে লাখ লাখ অন্যান্য মাছের পোনা, রেনু ও প্লাংকটন ধ্বংস করে জেলেরা। এ বিষয়ে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বেশীরভাগ সময়েই তা বন্ধ রাখা যাচ্ছেনা। সংশ্লিষ্ট জেলেরা যদি স্বল্প লাভের আশা পরিত্যাগ করতে পারে তবে প্রাকৃতিক দেশী প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব রক্ষা করে তারা আরও বেশী উপার্জনের পথটি খোলা রাখতে পারে বলে জানালেন এ অঞ্চলে জেলেদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নকারী বেসরকারী সংস্থা জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি। তিনি আরও বলেন, শুধু আইনের প্রয়োগ নয়, সচেতনতাও বাড়াতে হবে।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলী বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তন জনিত কারণে নানা প্রতিকুলতায় দেশী প্রজাতির প্রাকৃতিক মাছ যেমন কমেছে তেমনি চাষাবাদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অন্যান্য মাছও উৎপাদন চলছে। এভাবেই এ জেলার মাছের প্রাচুর্যতা বজায় রয়েছে। সরকারীভাবে মাছের আহরন ও উৎপাদন বাড়াতে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। সমুদ্রগামী জেলেদের বিনামূল্যে সরকারীভাবে সমুদ্র নিরাপত্তা জনিত উপকরণ সামগ্রী প্রদান কার্যক্রম চলছে।