বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : আত্মতুষ্টিতে না ভুগে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য কাজ করুন : প্রধানমন্ত্রী

146

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-গণভবন-সংবর্ধনা
আত্মতুষ্টিতে না ভুগে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য কাজ করুন : প্রধানমন্ত্রী

’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর ৬ বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হলে দেশে ফিরে আসার সময়কার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন একটা সময়ে আমি দেশে ফিরেছিলাম যখন দেশে খুনীদের রাজত চলছিল, যুদ্ধাপরাধীরাই দেশ চালাচ্ছিল। তারা আমার উপর হামলা চালিয়েও বেশ কয়েকবার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই আমাকে বাঁচিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেই আমরা তিন তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছি এবং সুশাসনের মাধ্যমে দেশকে পরিচালনা করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন দেশের বর্তমান উন্নয়নের পেছনে দৃঢ় ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে তাঁর সরকারের সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী পরিকল্পনা। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হয়েছে।
আওয়ামী লীগ বিরোধীরা এখনও ভীষণভাবে সক্রিয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসক শ্রেণির উচ্ছিষ্টভোগী ও সুবিধাভোগীরা এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। যদিও জনগণের মধ্যে তাদের কোন ভিত্তি নেই, কিন্তু তারা ক্ষমতা লিপ্সু।
‘ক্ষমতার লোভে তারা স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি এবং খুনী চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে,’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা এক শ্রেণির সংবাদপত্রের সমালোচনা করে বলেন, তাঁর দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য নিয়ে কয়েকটি পত্রিকা বসেই আছে, জনগণকে তাঁর সরকার সম্পর্কে বিভ্রান্ত করার জন্য নির্বাচনের সময় তারা একটার পর একটা ছেড়ে দেবে।
দলের সফল নেতা ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এরা দুর্ভাগ্যজনক ভাবে লেগেই থাকে অভিযোগ করে তিনি এদের বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান ।
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এদিন প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
তাঁরা শেখ হাসিনাকে তাঁর ৭২ তম জন্মদিনেরও শুভেচ্ছা জানান। ২৮ সেপ্টেম্বও ছিল তাঁর জন্মদিন। সেদিন তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশনে যোগদান, বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং এসময়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসু হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বিশ্¦ নেতৃবৃন্দ এখন বাংলাদেশকে মর্যাদার চোখে দেখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা নিজেকে বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, বাংলাদেশকে অধিষ্ঠিত করেছিলেন বিশ্বে মর্যাদার আসনে। যেকোন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে তিনি যেতেন সেখানেই তিনি থাকতেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাঙালি জাতি বিশ্বে সেই মর্যাদার আসনটি হারিয়ে ফেলে।
‘আমরা সেই হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে সবসময়ই সচেষ্ট ছিলাম তাই বঙ্গবন্ধু খুনীদের বিচার করেছি এবং দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে গেছি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা দাবি করতেই পারি যার অনেকটাতেই আমরা সফল হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার খুনী এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করে জাতির ললাটে লেপ্টে থাকা কালিমা দূর করেছি। জাতির পিতা যেমনটি বলেছিলেন, বাঙালিদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, সেটা আজ বিশ্বে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সকলকে পুণরায় সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে অনেক খুনী এবং বিশ্বসঘাতকের জন্মও এদেশে হয়েছে যারা এ মাটির সন্তান হয়েও বাংলাদেশের অভ্যুদ্দয়কে কখনও মেনে নিতে পারেনি।
‘তারা একসময় পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিল এবং পাকিস্তানী প্রভুদেরই তারা দাসত্ব করতে চায়, তাদের বংশধরেরাও রয়ে গেছে, যারা এই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে,’ -যোগ করেন তিনি।
ভোটের রাজনীতি প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই এখন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোটের কথা বলেন, কিন্তু তারা জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ-না ভোটের কথা ভুলে গেছেন। ’
তিনি বলেন, তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।
এ প্রসংগে শেখ হাসিনা বলেন, গত সাড়ে নয় বছরে উপনির্বাচন, পৌরসভা, মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ দেশে ছয় হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেউ এসব নির্বাচন নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে পারে নি।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, নিউইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁর ট্রাম্পের সংগে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংগে আলাপকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া জাতির পিতার খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেন এবং মার্কিন প্রেসিডন্ট সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী এবারের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা শরনার্থীর মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদান এবং রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষে শান্তিপূর্ণ কূটনীতি পরিচালনায় অবদানের জন্য ইন্টারপ্রেস সার্ভিসেস নিউজ এজেন্সী এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন-এর কাছ থেকে পাওয়া দু’টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও এসময় দেশের জনগণকে উৎসর্গ করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/একেএইচ/১৬৫৫/আরজি