হারিয়ে যাওয়া লোকজ বায়োস্কোপ এখনো মানুষকে টানে

486

মেহেরপুর, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বাসস) : কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে বাংলার বিনোদনের লোকজ মাধ্যম বায়োস্কোপ। গ্রামবাংলার জনপদে বেড়ে ওঠা মানুষের যথেষ্ট পরিচয় আছে বায়োস্কোপের সাথে। কাঠের বাক্সে চোখ লাগিয়ে গানের তালে ছবি দেখার দৃশ্য আর চোখেই পড়ে না। খঞ্জনি আর গানের তালে বাক্সের ভেতর পাল্টে যায় ছবি। আর তা দেখে যেন গল্পের জগতে হারিয়ে যায় ছেলে বুড়ো সবাই।
একটা সময় বায়োস্কোপয়ালা হাতে ঝুনঝুনি (প্রেমবাঁশি) বাজিয়ে বিভিন্ন রকমের আলোচিত ধারা বর্ণনা করতে করতে ছুটে চলত গ্রামের সরু রাস্তা ধরে। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তার পেছন পেছন বিভোর স্বপ্ন নিয়ে দৌঁড়াত গ্রামের ছেলেমেয়েরা। বায়োস্কোপয়ালার ছন্দময় ধারা বর্ণনায় আকর্ষিত হয়ে ঘর ছেড়ে গ্রামের নারী-পুরুষ ছুটে আসত বায়োস্কোপের কাছে। একসাথে সবাই ভিড় জমালেও চার পাঁচজনের বেশী একসাথে দেখতে না পারায় অপেক্ষা করতে হতো। সিনেমা হলের মতো এক শো, এরপর আবার আর তিন বা চারজন নিয়ে শুরু হতো বায়োস্কোপ। বায়োস্কোপ দেখানো শুরু করলেই পায়ে ঘুঙ্গুর বেঁধে নেচে নেচে ‘কী চমৎকার দেখা গেল’ বলে ফের শুরু হতো বায়োস্কোপয়ালার ধারা বিবরণী।
সম্প্রতি মেহেরপুর জেলা শহরের মল্লিক পুকুর পাড়ে ঝিনাইদহের বয়োবৃদ্ধ ওলি আহাদকে দেখা গেল বায়োস্কোপ প্রদর্শন করতে। তিনি জানান- এখনও এই বায়োস্কোপের চাহিদা আছে। প্রতিদিন তিনি চার থেকে ৫শ টাকা উপার্জন করেন বায়োস্কোপ দেখিয়ে।
মেহেরপুরের ইতিহাস গ্রন্থের লেখক তোজাম্মেল আযম এ প্রসঙ্গে জানান, বায়োস্কোপ আমাদের দেশের লোকজ ঐতিহ্য। গ্রামীণ জনপদের মানুষের অন্যতম বিনোদন ছিল বয়োস্কোপ।একটা সময় এই মাধ্যমে জেলা ও দেশের ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরা হতো। যদিও হিমঘরে চলে গেছে বায়োস্কোপ তারপরও আগ্রহ রয়ে গেছে মানুষের। গ্রাম ও শহরের মানুষকে এখনও বায়োস্কোপ টানে।