বাসস দেশ-৪ : বিএসএমএমইউতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ উদযাপিত

166

বাসস দেশ-৪
বিএসএমএমইউ-র‌্যালি
বিএসএমএমইউতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ উদযাপিত
ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আজ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বিশ্ব হার্ট দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগ ও এ্যালিউমিনি এ্যাসোসিয়েশন অফ কার্ডিওলজি’র উদ্যোগে র‌্যালি ও বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্ব হার্ট দিবস এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “মাই হার্ট, ইউর হার্ট”। এই স্লোগানকে সাথে নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস।
র‌্যালি ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি ডিভিশনের প্রধান ও কার্ডিওলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যার্নাজী এবং কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডিভিশন অফ হার্ট ফেলিউর-এর প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক ও এ্যালিউমিনি এ্যাসোসিয়েশন অফ কার্ডিওলজি-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান।
বৈজ্ঞানিক সেমিনারে “মাই হার্ট, ইউর হার্ট” শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু। “ম্যানেজমেন্ট অফ হাইপারটেনশন উয়িথ পাওয়ার এন্ড প্রোটেকশন: রোল অফ দি মাস্টার সারটান” শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রায়হান মাসুম মন্ডল।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, সবাইকে হার্ট সুস্থ রাখতে হলে এর যতœ নিতে হবে। হার্ট সচল থাকলে ব্রেনও ভালো থাকবে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, শাক-সবজী, ফলমূল পরিমাণ মত খেতে হবে এবং চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। এর সাথে সাথে বিশ্ব হার্ট দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আমাদের সবাইকে তিনটি বিষয় পালনের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, ধূমপান করবো না ও সব ধরণের এ্যালকোহল পরিহার করবো, সুষম খাদ্য বা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাব এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিশ্রম করবো।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, হৃদপিন্ড হচ্ছে মানুষের শরীরের একমাত্র অঙ্গ, যেটা আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে বাঁচিয়ে রাখে, কেননা মানুষের মস্তিষ্কের মৃত্যু হলেও আমরা তাকে জীবিত বলতে পারি যতক্ষণ পর্যন্ত হৃদপিন্ডের কার্য ক্ষমতা সচল থাকবে। বর্তমানে, মানুষে মৃত্যুর যত কারণ আছে, হৃদপিন্ড ও রক্তনালি জনিত রোগের কারণে মৃত্যু হলো সবচেয়ে বেশি।
এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায়, ২০০০ সালের শুরু থেকে প্রতিবছর ১৭ মিলিয়ন লোক মারা যায় এই হৃদপিন্ড ও রক্তনালি জনিত রোগের কারণে। দেখা যায়, হৃদপিন্ডে রক্তনালির ও মস্তিষ্কের ষ্ট্রোক জনিত কারণে মৃত্যুর হার ক্যান্সার, এইচআইভি-এইডস্ এবং ম্যালেরিয়া থেকেও বেশি। বর্তমানে ৩১ শতাংশ মৃত্যুর কারণ ধরা হয় এই হৃদরোগ ও রক্তনালি জনিত রোগের কারণে এবং অল্প বয়সে মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কারণও এ হৃদরোগকে দায়ী করা হয়।
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষন হল এনজাইনা, শ্বাস কষ্ট হওয়া, অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন হওয়া ইত্যাদি। এনজাইনা হচ্ছে, রোগীর সাধারণত বুকে ব্যথা, বুকে চাপ অনুভব করা, বুক ভার ভার হওয়া, দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হওয়া ইত্যাদি। কারো করোনারি আর্টারী বা হার্টের রক্তনালির ৭০ শতাংশ ব্লক হয়ে গেলে তখনই এনজাইনা হয়ে থাকে। কখনো কখনো এনজাইনা থেকে র্হ্টা অ্যাটাক হয়। আবার করোনারি ধমনি যখন ১০০ শতাংশ ব্লক হয়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ফলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা, যেখানে জীবন ও মৃত্যু খুব কাছাকাছি চলে আসে। এটি সাধারণত বয়স্কদের রোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের এটি হয়ে থাকে। আমাদের এদেশে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের এটি হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে আমাদের দেশের লোকের ১০ বছর আগেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
এখন ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী, এমনকি ২৫-৩০ বছর বয়সীরাও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ হলো- স্বাস্থ্য সম্মত খাবার না খাওয়া, ধুমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম না করা ও অ্যালকোহল পান করা।
এ ছাড়া এ অঞ্চলে দূর্বল হার্ট বা কার্ডিওমায়োপ্যাথী একটি পরিচিত হৃদরোগ যেখানে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যায়। বাতজ্বর জনিত হৃদরোগ বাংলাদেশের আরেকটি বড় সমস্যা। সাধারণত ছোট বেলায় বাতজ্বর থেকে পরবর্তীতে বাতজ্বর জনিত হৃদরোগ হয়ে থাকে। বাতজ্বর জনিত রোগে সাধারণত হার্টের ভাল্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর মধ্যে কিছু রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। আর কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে শৈল চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হতে পারে।
হৃদরোগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণের মধ্যে যদি কারো পরিবারে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শিশুর জন্মগত হৃদরোগ থাকে, হবে সেক্ষেত্রে ঝুঁকি কমানোর জন্য আমাদের কিছুই করার থাকে না।
হৃদরোগ প্রতিরোধে কায়িক পরিশ্রম করা, হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা, ধূমপান না করা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
যখন আপনার হার্টের অসুখ থাকবে, তখন সবকিছুতে নিজেকে ক্লান্ত মনে হবে। আপনি ক্রমাগত বৃদ্ধ হতে থাকবেন। আপনি হয়ে যাবেন অনুভূতিহীন।
এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে হৃদরোগ সম্পর্কিত জ্ঞান দেয়া হয়, যাতে তারা সময়মত হার্ট পরীক্ষা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ধুমপান বর্জন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমে নিজেদের নিয়োজিত রাখা, স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়া এবং অ্যালকোহল পান থেকে নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে নিজেদের হার্টকে সুস্থ ও সচল রাখতে পারে। তাই সাধারণ জনগণকে তাদের জীবন অভ্যাস পরিবর্তনে উৎসাহ প্রদান করা ও হৃদরোগ সম্পর্কিত জ্ঞান প্রদান করাই বিশ্ব হার্ট দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
বাসস/সবি/এফএইচ/১৪০৫/এমএবি