বাসস ক্রীড়া-১২ : লিটনের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২২২ রান

644

বাসস ক্রীড়া-১২
ক্রিকেট-এশিয়া কাপ
লিটনের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২২২ রান
দুবাই, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বাসস) : ওপেনার লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে এশিয়া কাপ ১৪তম আসরের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২২২ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। লিটন ১১৭ বলে ১২১ রান করেন।
দুবাইয়ে শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে টস ভাগ্যে হেরে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাট হাতে নেমে দলকে দারুন সূচনা এনে দেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ফাইনালের আগে পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের উদ্বোধণী ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ রান ছিলো ১৬। তাই লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যান মেহেদিকে দিয়ে জুয়া খেলার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। তাতে সফলও হয় বাংলাদেশ।
লিটনের সাথে জুটি বেঁেধ বড় সংগ্রহই এনে দেন মিরাজ। মিরাজ ধীরলয়ে থাকলেও মারমুখী মেজাজে ছিলেন লিটন। তাই ৭ দশমিক ৪ ওভারে ৫০ রান পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। এসময় লিটনের রান ছিলো ২৬ বলে ৪১। অন্যপ্রান্তে ২২ বলে ১৫ রান মিরাজের।
১২তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারির সহায়তায় ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। ৩৩ বলেই হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করার এক বল পরই জীবন পান তিনি। ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন লিটন। সেই ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন মিড উইকেটে থাকা ভারতের যুজবেন্দ্রা চাহাল। ফলে ৫২ রানে জীবন পান লিটন।
জীবন পেয়ে আর পেছন ফিরে তাকাননি লিটন। বাংলাদেশের রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তিনি। তাই বিনা উইকেটে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর শতরানে পৌঁছে যায়। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে ১শ রান পায় বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের পর ও ২৭ ওয়ানডের পর উদ্বোধণী জুটিতে শতরান পেল টাইগাররা।
তবে ২১তম ওভারের পঞ্চম বলে বিচ্ছিন্ন হতে হয় লিটন ও মিরাজকে। ব্রেক-থ্রু এনে দিতে পারদর্শী ভারতের অফ-স্পিনার কেদার যাদব বিদায় দেন মিরাজকে। ৩টি চারে ৫৯ বলে ৩২ রান তুলে মিরাজ আউট হলে ১২০ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ম্যাচে ভাল একটা শুরুর জন্য ক্ষুধার্ত ছিলো বাংলাদেশ শিবির। আজ বাংলাদেশের ক্ষুদা মিটিয়েছেন লিটন ও মিরাজ। তাই দেখার পালা ছিলো এই উড়ন্ত সূচনাটাকে ধরে রেখে কত দূর যেতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু না, উড়ন্ত শুরুর পরও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ২২২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ শেষ ৯ উইকেটে ১০২ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ভারতের লেগ-স্পিনার চাহালের বলে লেগ বিফোর হন ইমরুল কায়েস। ১২ বলে ২ রান করেন তিনি। উইকেটে গিয়ে বাউন্ডারিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবারের আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুন্যে প্রদর্শন করা মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ভারতের ব্রেক-থ্রু ম্যান কেদারের বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারিরর ফাঁেদ পান দেন মুশি। ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যচ হয়ে ফিরেন তিনি। ৯ বলে ৫ রান করেন মুশফিকুর।
আগের ম্যাচে মুশফিকুরের সাথে ১৪৪ রানের মহামূল্যবান জুটি গড়া মোহাম্মদ মিথুন এবার ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনতে। লিটনের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁেদ পড়েন মিথুন। ৪ বলে ২ রান নামের পাশে রাখতে সক্ষম হন মিথুন।
মিথুনের ফিরে যাবার কিছুক্ষন বাদেই সেঞ্চুরির স্বাদ নেন লিটন। ৮৬তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। দলের মিডল-অর্ডার যখন যাওয়ার আসার মিছিল শুরু করেন ঐ সময় দলের রানের চাকা ঘুড়াচ্ছিলেন লিটন।
তাই লিটনকে সঙ্গ দেয়ার জন্য ঐ সময় যোগ্য সঙ্গীর প্রয়োজন ছিলো। এমন পরিস্থিতিতে অতীতে ব্যাট হাতে নিজের কারিশমা দেখিয়েছিলেন মাহমুুদুল্লাহ। তাই এবারও তার কাছে প্রত্যাশা ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু এবার ব্যর্থতা হলেন তিনি। ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের পাশে ক্যাচ দিয়ে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন মাহমুদুুল্লাহ। ১৬ বলে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
মাহমুদুল্লাহ যখন বিদায় নেন তখন দলের স্কোর ৫ উইকেটে ১৫১ রান। এ অবস্থাতেও বড় স্কোর গড়ার ভালো সুযোগ ছিলো টাইগারদের। তাই সৌম্য সরকারকে নিয়ে ভালো একটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন। মিরাজের পর আগের চার জুটির সাথে ৮,৯,২ ও ১২ রান যোগ করতে পারেন লিটন।
তবে সৌম্যকে নিয়ে ধীরলয়ে ৩৭ রান যোগ করতে পারেন লিটন। যখন দু’জনের বোঝাপড়াটা ভালো হচ্ছিল ঠিক তখনই বিদায় নিতে হলো লিটনকে। থার্ড-আম্পায়ার স্টাম্প আউট ঘোষনা করেন লিটনকে। ১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১৭ বলে ১২১ রান করেন লিটন।
১৮৮ রানে লিটনের বিদায়ের পর শেষদিকে সৌম্য দলকে সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দেন। ২২২ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে সৌম্য আউট হবার পরই ঐ স্কোরেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। তখনও ইনিংসে ৯ বল বাকী ছিলো। ১টি করে চার ও ছক্কায় ৪৫ বলে ৩৩ রান করেন সৌম্য। ভারতের কুলদীপ ৩টি ও কেদার ২টি উইকেট নেন
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন দাস স্টাম্প ধোনি ব কুলদীপ ১২১
মেহেদি হাসান ক রাইদু ব যাদব ৩২
ইমরুল এলবিডব্লু ব চাহাল ২
মুশফিকুর রহিম ক বুমরাহ ব যাদব ৫
মোহাম্মদ মিথুন রান আউট (জাদেজা) ২
মাহমুদুল্লাহ ক বুমরাহ ব কুলদীপ ৪
সৌম্য সরকার রান আউট (রাইদু/ধোনি) ৩৩
মাশরাফি বিন স্টাাম্প ধোনি ব কুলদীপ ৭
নাজমুল রান আউট (মনীষ) ৭
মুস্তাফিজুর অপরাজিত ২
রুবেল হোসেন বোল্ড ব বুমরাহ ০
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-৫) ৭
মোট : (অলআউট, ৪৮.৩ ওভার) ২২২
উইকেট পতন : ১/১২০ (মিরাজ), ২/১২৮ (ইমরুল), ৩/১৩৭ (মুশফিকুর), ৪/১৩৯ (মিথুন), ৫/১৫১ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১৮৮ (লিটন), ৭/১৯৬ (মাশরাফি), ৮/২১৩ (নাজমুল), ৯/২২২ (সৌম্য), ১০/২২২ (রুবেল)।
ভারত বোলিং :
ভুবেনশ্বর : ৭-০-৩৩-০ (ও-১),
বুমরাহ : ৮.৩-০-৩৯-১ (ও-১),
চাহাল : ৮-১-৩১-১ (ও-১),
কুলদীপ : ১০-০-৪৫-৩,
জাদেজা : ৬-০-৩১-০,
যাদব : ৯-০-৪১-২ (ও-১)।
বাসস/এএমটি/২১৪৫/স্বব