আইনগত সহায়তা ছাড়া আইনের দৃষ্টিতে সমতা অর্জন সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

220

ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বাসস) : প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আইনগত সহায়তা ব্যতিরেকে ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা অর্জন’ কখনওই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, তাই আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগণকে সরকারী আইনি সহায়াতা প্রদানে ২০০০ সালে প্রণীত হয়েছে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’। এ আইনের আওতায় জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত আইনি সহায়তা পেয়েছেন ৩ লাখ ২৮ হাজার ১২৬ জন।
‘লিগ্যাল এইড ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে তিনি আজ এ কথা বলেন। সুপ্রিমকোর্ট কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ কর্মশালা যৌথভাবে আয়োজন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিম কোর্ট কমিটি ও বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তৃতা করেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। আরো বক্তৃতা করেন এমজেএফ’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. জাকির হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সভাপতি সাঈদ আহমেদ।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব সহকারী এটর্নি জেনারেল এডভোকেট টাইটাস হিল্লোল রেমার সঞ্চালনায় কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তৃতা করেন এলআরএফ সাধারণ সাম্পাদক হাসান জাভেদ।
কর্মশালায় ‘লিগ্যাল এইড ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক মূল লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেইলি অবজারভার পত্রিকার অনলাইন এডিটর ও এলআরএফ’র সাবেক সাধারন সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় আরো বলেন, সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এর সুফল দেশের তৃনমূলে পৌঁছেছে। জনগণের কাছে আইনি সেবা পৌঁছে দেয়া তথা সুশাসন নিশ্চিতে বিচারক, আইনজীবী, এনজিও কর্মী, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকতাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে ধরা হয়। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সমাজের অসঙ্গতি দূরীকরণে এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে গনমাধ্যম তথা সাংবাদিকতার ভূমিকা অপরিসীম। এ দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকার নিয়ে সাংবাদিকরা অতন্দ্রপ্রহীর ভূমিকা পালন করছে।
প্রধান বিচারপতি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত লিগ্যাল এইডে আইনি সহায়তা পেয়েছেন সর্বমোট ৩ লাখ ২৮ হাজার ১২৬ জন। মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৬ হাজর ৫২৪টি, বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির আওতায় লিগ্যাল এইডে গত তিন বছরে আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮০ টাকা। তিনি জানান, গত প্রায় তিন বছরে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইডে দরখাস্ত এসেছে ৯৭৮টি, মামলা নিস্পত্তি হয়েছে ৪৯৩টি এবং আইনগত পরামর্শ ৯ হাজার ৩৬০টি। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টে প্রথমবারের মতো জেল আপিল শুনানির জন্য আলাদা বেঞ্চ করা হয়েছে। এতে বিচারপ্রার্থীরা সুফল পাচ্ছেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা তথা লিগ্যাল এইড বিষয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ও সচেতনতা গড়তে আরো ইতিবাচক উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, তিনি (প্রধান বিচারপতি) একসময় সংবাদ পত্রিকার আদালত প্রতিবেদক ছিলেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি তার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন, বিচারিক কার্যক্রমে বিচারকগন অনেক কথা বলেন। কিন্তুু দেখা যায় ওইসব কথার সূত্র ধরে অনেকে রিপোর্টিং করেন। যা উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, আদালতের রেকর্ডে যা থাকবে তা নিয়েই রিপোর্টিং করা সমিচিন। একজন রিপোর্টারকে নির্ণয় করতে হবে কতটা রিপোর্ট হবে। কেননা আদালত বা কোর্ট স্পর্শকাতর জায়গা। তাই এখানে রিপোর্টিং-এ আরো সতর্ক থাকা উচিৎ।
তিনি বলেন, আমি ইংল্যান্ড-এ অবস্থানকালীন দেখেছি সেখানে আদালতে সাংবাদিকদের বসার আলাদা স্থান বা সিট রয়েছে। আমাদের এখানেও এ বিষয়টি নিশ্চিতে আমার নজরে থাকবে।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যারা বিখ্যাত সাহিত্যিক, কলামিস্ট তারা সকলেই সাংবাদিক ছিলেন। এ বিষয়ে তিনি আবদুল গাফফার চৌধুরী, শামসুর রহমাননহ কয়েক জনের নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধসহ রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। যা প্রশংসার দাবি রাখে।
মাহবুরে আলম বলেন, লিগ্যাল এইডে এখন অসহায় অস্বচ্ছল বিচার প্রার্থীরা সুবিধা পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পাশাপশি আইনজীবীদের আরো এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি তথা এডিআর ভারতে বহু আগ থেকেই প্রচলিত। মামলাজট কমানো এবং দ্রুত ন্যায়বিচার লাভ এবং মামলা নিষ্পত্তিতে এটা সময়ের দাবি।
এ কর্মশালায় এলআরএফ’এর সাবেক সভাপতি এম বদিউজ্জামান ও আশুতোষ সরকার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম পান্নূ ও দিদারুল আলম দিদার, কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ, সংগঠনের সিনিয়র সদস্যগণসহ অন্যান্য সদস্যরা অংশ নেন।