বন্যপ্রাণি প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটন নিষিদ্ধের সুপারিশ

344

খুলনা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার সুন্দরবনের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ। বন্যপ্রাণির বংশ বিস্তারে প্রজনন মৌসুম জুন থেকে আগস্ট এ তিন মাসে সুন্দরবনে পর্যটন প্রবেশ নিষিদ্ধের বিধান আসছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক (সিএফ) বরাবর প্রেরিত এ প্রস্তাবটি সুপারিশ করে অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী পর্যটন মৌসুমের পূর্বেই এ সম্পর্কিত নির্দেশনা আসবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
সূত্র মতে, মাবানা ট্যুরস গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে তিন দিনের জন্য মাল্টার ১২ জন পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। পর দিন ৫ ডিসেম্বর তারা শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোল এলাকায় একটি ড্রোন উড়িয়ে সুন্দরবনের চিত্র ধারণ করছিল। ড্রোন উড়তে দেখে দুবলা স্টেশনের বন রক্ষীরা গিয়ে সেটি নামিয়ে তা জব্দ করে। পরে ওই পর্যটকদের নিয়ে সুন্দরবন থেকে বেরিয়ে যেতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আইন বিরোধী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে মাবানা ট্যুরসকে নির্দেশনা দেয় বন বিভাগ। মূলত পর্যটন অপারেটর ও ট্রাভেলস্ ট্যুরস্ কোম্পানিগুলোর আইন বিরোধী কার্যকলাপের কারণেই সুন্দরবন অভ্যন্তরে বন্যপ্রাণি প্রজনন মৌসুমে পর্যটক প্রবেশ রোধের চিন্তা করে বন বিভাগ।
জানা গেছে, বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নয়নাভিরাম সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা, মায়া হরিণসহ অন্তত ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণির আবাসস্থল। দুর্লভ সব প্রাণির বংশ বিস্তার নির্বিঘœ করতে প্রজনন মৌসুমে সব ধরনের পর্যটন নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ (বাগেরহাট) থেকে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষকের মাধ্যমে প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হয় গত জুনে। বন্যপ্রাণির অবাধ বিচরণ ও বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে বন বিভাগের সদর দপ্তরে পাঠানো এ প্রস্তাবটি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিভাগ।
বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মদিনুল আহসান বলেন, ‘প্রত্যেকটা প্রাণি প্রজনন সময়কালটা স্পর্শকাতর মুহূর্ত। বংশ বিস্তার ও প্রাণি সুরক্ষায় ওই সময়টা নিরাপদ হওয়া জরুরি। এ জন্যে বন্য প্রাণি প্রজনন মৌসুমের তিনটি মাস সুন্দরবন অভ্যন্তরে গণপ্রবেশ না করাই উত্তম।’
প্রস্তাবকারী পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা ও মায়া হরিণ, বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিন, লোনা পানির কুমির, বন্য শূকর, উদবিড়ালসহ ৩৭৫ প্রজাতির প্রাণি।
সুন্দরবনে ২০০৪, ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫ সালের জরিপে দেখা গেছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ বন্যপ্রাণির আধিক্য এলাকাগুলোতেই পর্যটকরা ভ্রমণে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। জুন থেকে আগস্ট এ তিন মাস সুন্দরবনের টাইগার ও হরিণসহ বন্য প্রাণির প্রজনন মৌসুম। পর্যটকদের কারণে বন্যপ্রাণির অবাধ বিচরণ ও প্রজননে বাধার সৃষ্টির ফলে বংশ বিস্তারও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় প্রজনন মৌসুমের তিন মাস পর্যটন নিষিদ্ধ করার একটি প্রস্তাব খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরীর কাছে গত জুন মাসে পাঠানো হয়।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বললেন, ‘বন্যপ্রাণি প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবন অভ্যন্তরে পর্যটন প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রস্তাাবটি বন অধিদপ্তরে প্রেরণ করেছি। সুন্দরবন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণের স্বার্থে বিষয়টির পজেটিভ সুপারিশ করেছি। আগামী পর্যটন মৌসুমের পূর্বেই মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসবে বলে আশা করছি।’