ভোলায় মুরগি পালনে যুবকের ভাগ্য বদল

282

ভোলা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলার সদর উপজেলায় মুরগি পালন করে রবিশ্বর হাওলাদার নামের এক যুবক ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নিয়ে ৩ বছর আগে ১২শ মুরগি দিয়ে তার পোলট্রি ফার্ম শুরু করেন। প্রথম বছর লাভবান হওয়ায় পর্যায়ক্রমে প্রায় ৬ হাজার মুরগি দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে দুটি খামার পরিচালনা করছেন তিনি। সময়ের ব্যবধানে আজ তিনি সফল খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন আরও অনেকের। তার সাফল্য ওই গ্রামের বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে।
ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের বেড়িরহাট গ্রামের বাসিন্দা রবিশ্বর হাওলাদার জানান, বিএ পাস করার পর নানা জায়গায় ঘুরেছেন চাকরির আশায়। কিন্তু কোথাও কোনো আশার আলো দেখতে পাননি। পরে ভাগ্য বদলের আশায় কিছু আবাদি জমি বিক্রি করে মাছ চাষ শুরু করেন। মাছ চাষেও তার ভাগ্য ফেরেনি। ফলে আবার তার বেকার জীবন শুরু হয়। ২০১৫ সালে বড় ভাই সুধাংশু হাওলাদারের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি ১৫ শতাংশ জমির ওপর বিনয় পোল্ট্রি ফার্ম নামে একটি মুরগির খামার গড়ে তোলেন। এ খামারই শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে।
প্রথমে তিনি ১২ শ বয়লার ও লেয়ার মুরগি নিয়ে খামার চালু করেছিলেন। এখন সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তার খামারে গড়ে প্রতিদিন আড়াই হাজার ডিম উৎপাদন হয়। এ ডিম বিক্রি করে তিনি প্রতি মাসে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। পাশাপাশি তার খামারে ৬ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে। তাদের সংসারেও এখন অভাব দুর হয়েছে।
রবিশ্বর হাওলাদারের খামারের শ্রমিক শ্রীধাম, জামাল, রিয়াদ ও আশিক জানান, তারা এক সময় ফসলের মাঠে কাজ করতেন। বছরের একটা সময় কাজের অভাবে তাদের ধার দেনা করে চলতে হতো। কিন্তু এখন মুরগির খামারে কাজ করে তাদের ছেলে মেয়ের পড়ার খরচ ও সংসার ভালো ভাবেই চলেছে।
এদিকে রবিশ্বর হাওলাদারের সাফল্য দেখে ওই গ্রামের বেকার যুবকরা এখন মুরগি পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ তার কাছে আসেন, তিনি তাদেরকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ওই গ্রামের যুবক বাবুল সর্দার জানান, তারা গ্রামের অন্তত ১৫ জন যুবক মুরগির খামার সম্পর্কে ধারণা ও প্রশিক্ষণ নিতে রবিশ্বর হাওলাদারের কাছে আসেন। হাতে কলমে সকল প্রক্রিয়া দেখেন তারা। এতে করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের আমিষের চাহিদা মেটাতে অবদান রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন মনসুর জানান, মুরগি পালন করে সংসারের অভাব দুর হয়েছে রবিশ্বর হাওলাদারের। সেই সাথে পেয়েছেন পরিচিতি এবং সুখ্যাতি। সব মিলিয়ে রবিশ্বর হাওলাদার এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। পাশাপাশি তার সফলতা দেখে স্থানীয় বেকার যুবকরা তাদের কর্মসংস্থান হিসেবে পোলট্রি খামারকে বেছে নিচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ আলমগীর জানান, রবিশ্বর হাওলাদার শুধু নিজেই সফলতা অর্জন করেননি, তাকে দেখে যুব সমাজ উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে ওই এলাকায় মুরগী পালনে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রধান এই কর্মকর্তা। একইসাথে প্রানী সম্পদ কার্যালয় থেকে তাকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।