এশিয়া কাপ : ভারতের ঘাম ঝরিয়ে হারলো হংকং

375

বাসস ক্রীড়া-২১
ক্রিকেট-এশিয়া কাপ
ভারতের ঘাম ঝরিয়ে হারলো হংকং
দুবাই, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ভারতের ছুড়ে দেয়া ২৮৬ রানের টার্গেটে উদ্বোধনী জুটিতে বিনা উইকেটে ১৭৪ রান তুলে ম্যাচ জয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকে বাছাই পর্ব থেকে উঠে আসা পুচকে হংকং। কিন্তু মিডল ও লোয়ার-অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫৯ রান করে শেষ পর্যন্ত ভারতের ঘাম ঝরিয়ে ২৬ রানে ম্যাচ হারলো হংকং। এই হারে এবারের এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিলো তারা। ‘এ’ গ্রুপ থেকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের স্বাদ নিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। এই গ্রুপ থেকে শেষ চার নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানও। কারণ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিলো পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লড়বে ভারত ও পাকিস্তান।
দুবাইয়ে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয় হংকং। ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো করেন ভারতের দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন তারা। ফলে প্রথম ৪৫ বলেই ৪৫ রান পেয়ে যায় ভারত। তবে ইনিংসের ৪৬তম বলে উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলতে হয় রোহিতকে। হংকং-এর অফ-স্পিনার এহসান খানকে উইকেট ছেড়ে মেরে বল আকাশে তুলে দেন রোহিত। মিড-অফে দাঁড়িয়ে সহজেই ক্যাচ লুফে নেন নিজাকাত খান। ৪টি চারে ২২ বলে ২৩ রান করেন টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেয়া রোহিত।
অধিনায়কের বিদায়ের পর ক্রিজে ধাওয়ানের সঙ্গী হন আম্বাতি রাইদু। ধাওয়ানের সাথে জুটি জমিয়ে তুলেন রাইদু। এ জুটি স্কোর শত রানের পর দেড়শও পেরিয়ে যায়। এরমধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ধাওয়ান।
ধাওয়ান সেঞ্চুরি তুলে ইনিংস বড় করলেও ৬০ রানের বেশি করতে পারেনি রাইদু। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন রাইদু। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩০ বলে ১১৬ রানের জুটি গড়েন ধাওয়ান ও রাইদু।
দলীয় ১৬১ রানে রাইদু আউট হলে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ধাওয়ান ও দিনেশ কার্তিক। কিছুটা মারমুখী মেজাজে ব্যাট চালান তারা। ফলে ৪০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ২৩৭ রানে পৌঁছে যায়। তবে ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন ধাওয়ান। ১৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ১২০ বলে ১২৭ রান করা ধাওয়ান কিঞ্চিত শাহর বলে আউট হন।
দলীয় ২৪০ রানে ধাওয়ান ফিরে যাবার পর ৬ রানের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে জায়গা করে নেন সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কার্তিক। ধোনি শুন্য ও কার্তিক ৩৩ রান করেন।
২৪৮ রানে পঞ্চম উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে কিছুটা চাপ সৃষ্টি করে হংকং। এরপর ইনিংসের শেষদিকে আরও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করে ভারতকে তিনশ রানের স্বাদ নিতে দেয়নি হংকং। শেষ চার ওভারে কোন চার বা ছক্কার আদায় করতে পারেনি ভারতের লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ফলে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৫ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। শেষদিকে, ১টি ছক্কায় ২৭ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন কেদার যাদব। হংকং-এর কিঞ্চিত শাহ ৩টি উইকেট নেন।
২৮৬ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নেমে ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হন হংকং-এর দুই ওপেনার নিজাকাত খান ও অধিনায়ক অংশুমান রাথ। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন তারা। তাই ৫৭ বলে দলের স্কোর ৫০ রানে নিয়ে যান নিজাকাত ও রাথ। এখানেই থমকে যাননি হংকং-এর দুই ওপেনার। দ’ুজনেই হাফ সেঞ্চুরি করনে। এ জন্য নিজাকাত খেলেছেন ৫৬ বল, রাথ ৭৭ বল। তাদের ব্যাটিং নৈপুন্যে ৩০ দশমিক ৩ বলে দেড়শ রানে পৌছে যায় হংকং-এর দলীয় স্কোর।
নিজাকাত ক্যারিয়ারের তৃতীয় ও রাথ সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজেদের ইনিংস বড় করছিলেন নিজাকাত ও রাথ। ফলে ৩৪ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ১৭৪ রান পেয়ে যায় হংকং। এই স্কোরে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে হংকং। অপরদিকে, কপালে চিন্তার ভাজ বড় হতে থাকে ভারতের।
তবে ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ভারতকে চিন্তা মুক্ত হবার সুযোগ করে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার কুলদীপ যাদব। এক্সট্রা কভারে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ক্যাচ নেন হংকং-এর অধিনায়ক রাথের। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৭ বলে ৭৩ রান করেন তিনি। ফলে ১৭৪ রানে নিজাকাতের সাথে বিচ্ছিন্ন হন রাথ। হংকং-এর পক্ষে জুটিতে সর্বোচ্চ রানের নয়া রেকর্ডও গড়েন নিজাকাত ও রাথ। অবশ্য আগের রেকর্ডটিও ছিলো নিজাকাত ও রাথের। ২০১৬ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে ১৭০ রান যোগ করেছিলেন তারা।
১৭৫ রানে হংকং-এর প্রথম উইকেট তুলে নিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় ভারতের বোলাররা। এরপর ১৯৯ রানের মধ্যে হংকং-এর আরও ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের লাগাম টেনে ধরে ভারত। নিজাকাত ও ক্রিস্টোফার কার্টারকে তুলে নেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ভারতের পেসার ২০ বছর বয়সী খলিল আহমেদ। নিজাকাত ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১৫ বলে ৯২ রানে আউট হন। কার্টার ৩ রানে ফিরেন।
২৫ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া হংকং’কে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন কিঞ্চিত শাহ ও এহসান খান। পঞ্চম উইকেটে জুটি বেঁেধ দলকে রানের যোগান দেন তারা। ফলে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরতে থাকে হংকং। তবে এ্ই জুটিতে বাধাঁ সৃষ্টি করেন যুজবেন্দ্রা চাহাল। ১৫ বলে ১৭ রান করা কিঞ্চিতকে শিকার করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে এহসানের সাথে ২৪ বলে ২৮ রান যোগ করেন কিঞ্চিত।
এরপর হংকং-এর লোয়ার-অর্ডারের আরও দু’ব্যাটসম্যানকে শিকার বানান চাহাল ও কুলদীপ। ফলে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায় হংকং। শেষ পর্যন্ত পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৫৯ রান পর্যন্ত যেতে পারে হংকং। শেষদিকে এহসান ২২ ও আফজাল অপরাজিত ১২ রান করেন। ভারতের খলিল ও চাহাল ৩টি করে উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
ভারত ইনিংস :
রোহিত ক নিজাকাত ব এহসান ২৩
ধাওয়ান ক আফজাল ব শাহ ১২৭
রাইদু ক ম্যাককেচিন ব নাওয়াজ ৬০
কার্তিক ক বাবর ব শাহ ৩৩
ধোনি ক ম্যাককেচিন ব এহসান ০
কেদার অপরাজিত ২৮
ভুবেনশ্বর ক অংশুমান ব শাহ ৯
শারদুল ক কার্টার ব আইজাজ ০
কুলদীপ অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-২, নো-১, ও-২) ৫
মোট : (৭ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৮৫
উইকেট পতন : ১/৪৫ (রোহিত), ২/১৬১ (রাইদু), ৩/২৪০ (ধাওয়ান), ৪/২৪২ (ধোনি), ৫/২৪৮ (কার্তিক), ৬/২৭৭ (কুমার), ৭/২৮২ (ঠাকুর)।
হংকং বোলিং :
আফজাল : ৪-০-৩৪-০,
নাওয়াজ : ৮-০-৫০-১ (ও-১, নো-১),
আইজাজ : ৮-০-৪১-১ (ও-১),
এহসান খান : ১০-০-৬৫-২,
নাদিম : ১০-০-৩৯-০,
নিজাকাত : ১-০-১৫-০,
শাহ : ৯-০-৩৯-৩।
হংকং ইনিংস :
নিজাকাত খান এলবিডব্ল্ ুব আহমেদ ৯২
অংশুমান রাথ ক শর্মা ব কুলদীপ ৭৩
বাবর হায়াত ক ধোনি ব চাহাল ১৮
ক্রিস্টোফার কার্টার ক ধোনি ব আহমেদ ৩
কিঞ্চিত শাহ ক ধাওয়ান ব চাহাল ১৭
এহসান খান ক এন্ড ব আহমেদ ২২
আইজাজ খান এলবিডব্ল্ ুব চাহাল ০
স্কট ম্যাককেচিন স্টাম্প ধোনি ব কুলদীপ ৭
তানবির আফজাল অপরাজিত ১২
এহসান নওয়াজ অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (লে বা-৪, নো-৩, ও-৬) ১৩
মোট (৮ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৫৯
উইকেট পতন : ১/১৭৪ (রাথ), ২/১৭৫ (নিজাকাত), ৩/১৯১ (কার্টার), ৪/১৯৯ (বাবর), ৫/২২৭ (শাহ), ৬/২২৮ (আইজাজ), ৭/২৪০ (ম্যাককেচিন), ৮/২৫৬ (এহসান)।
ভারত বোলিং :
ভুবেনশ্বর : ৯-০-৫০-০ (ও-২),
আহমেদ : ১০-০-৪৮-৩ (ও-১),
ঠাকুর : ৪-০-৪১-০ (ও-১),
চাহাল : ১০-০-৪৬-৩ (ও-১),
কুলদীপ : ১০-২-৪২-২ (ও-১),
কেদার : ৭-০-২৮-০।
ফল : ভারত ২৬ রানে জয়ী।
বাসস/এএমটি/০৯৪০/স্বব