চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার প্রশ্নে ভারতের সঙ্গে চুক্তির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

607

ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বাসস) : ভারতে মালপত্র আনা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে আজ একটি চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যে পরিবহনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিতা বৈঠকে ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করা এই চুক্তির উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘এই চুক্তিটি ৫ বছরের জন্য বলবৎ থাকবে এবং পরবর্তীতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আরো ৫ বছরের জন্য নবায়নের সুযোগ থাকবে।’
‘তবে, ৬ মাসের নোটিসে ইচ্ছা করলে যে কোন দেশ এই চুক্তিটি বাতিল করতে পারে’, যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ভারতের পণ্য পরিবহনের রুটটা হচ্ছে এ রকম- চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট টু আগরতলা ভায়া আখাউড়া একটা, চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট টু ডাউকি ভায়া তামাবিল, চট্টগ্রাম ও মোংলা টু সুতাকান্দি ভায়া শেওলা, চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট বিবিরবাজার ভায়া সীমান্তপুর।’
তিনি বলেন, এই চুক্তির আওতায় ভারত কর্তৃক চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যে পরিবহন করা হবে।
শফিউল আলম বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্টে যোগাযোগের জন্য যে কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে সে জন্যও চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখানে প্রভিশন রাখা হয়েছে, নেপাল ও ভুটান ইচ্ছা প্রকাশ করলে যুক্ত হতে পারবে।’
তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে পণ্য সামগ্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাংলাদেশের যানবাহন ব্যবহার করা হবে, বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী (গ্যাট) এবং দেশের নিয়ম মেনে চলতে হবে, শুল্ক বিভাগ ডিউটিজ অ্যান্ড ট্যাক্সেস সমপরিমাণ বন্ড গ্রহণ করা হবে। মালবাহী কার্গো শনাক্ত করার জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে।’
সচিব বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সক্ষমতা অনুসারে মালামাল পরিবহন প্রায়োরিটি প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য গ্যাট প্রিন্সিপাল অনুসারে শুল্ককর ব্যতীত চার্জ ফি ও পরিবহন খরচ আদায় করা হবে।’
এদিন মন্ত্রীসভার বৈঠকে দুইটি আইনের খসড়া এবং বিদ্যুৎ খাতে ব্যবসার জন্য একটি চিনা কোম্পানীর চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রীসভা ওআইসি সম্মেলন আয়োজনে ওআইসি সনদের সংশোধনীর প্রস্তাব অনুসমর্থনের অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী প্রতি তিন বছরের পরিবর্তে দুই বছর পর পর ওআইসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
‘বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) আইন, ২০১৮’ এবং ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
‘বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) আইন, ২০১৮’ ‘বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪’কে প্রতিস্থাপিত করবে এবং ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮’ ১৯৮৩ সালে দেশে সামরিক শাসনামলে জারিকৃত অর্ডিন্যান্সকে প্রতিস্থাপিত করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৮৪ সালের বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার অর্ডিন্যান্সকে সংশোধন করে নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে তেমন বড় পরিবর্তন নেই।
তিনি বলেন,‘বিপিএটিসির বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীকে পদাধিকার বলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।’
‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮’ সম্পর্কে শফিউল আলম বলেন,‘এটা আগে ইংরেজিতে ছিল, দ্য ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ড অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩। এটাকে বাংলায় রূপান্ত করে নিয়ে আসা হয়েছে। অল্প কিছু পরিবর্তন এখানে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে ছিল টেক্সটবুক, এটাকে বাংলায় করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক। আগে বোর্ডের গঠন ছিল চেয়ারম্যান এবং চারজন সদস্য। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে একজন চেয়ারম্যান এবং বিষয়ভিত্তিক আটজন সদস্য। নয় সদস্য মিলে বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সদস্যদের মধ্যে আগে কাজ ভাগ করে দেওয়া ছিল না, এখন আটজন সদস্যের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে- পাঠ্যপুস্তক, প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম, মাদ্রাসা শিক্ষাক্রম, কারিগরি শিক্ষাক্রম, শিক্ষাক্রম (প্রশিক্ষণ), শিক্ষাক্রম (গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন) এবং অর্থ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোরাম হওয়ার জন্য আগে পাঁচজনের মধ্যে তিনজন উপস্থিত হলেই হত, এখন প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচজনের উপস্থিতিতে কোরাম হবে।
এ ছাড়া, বোর্ডের কাজে দুটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে, ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা। এটা নতুন প্রস্তাবনা। আরেকটি হচ্ছে- ডিজিটাল ও মিথষ্ক্রিয়া পুস্তক প্রণয়ন ও অনুমোদন। বোর্ড কার্যাবলী সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রদত্ত অনুশাসন ও নির্দেশনার মাধ্যমে পরিচালনা হবে, এটাও নতুন, তিনি যোগ করেন।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দ্বারা বোর্ড পরিচালিত হবে বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়া আইনানুযায়ী বোর্ড প্রতিবছর ৩১ মার্চের মধ্যে সরকারের কাছে রিপোর্ট দেবে।
এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকারি মালিকাধীন ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়নার হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি চায়না ৪৯ ও ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্বে একটি কোম্পানি করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। এই কোম্পানি নাম দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড।’
তিনি বলেন, ‘ওনারা স্মার্ট মিটার থেকে শুরু করে যত ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম উৎপাদন করতে পারবে। ৫০ কোটি টাকা হবে এটির অথরাইজ ক্যাপিটাল এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ দেবে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি এবং ১৪ কোটি এক লাখ দেবে হেক্সিং। কোম্পানির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হবে ৫ লাখ সিঙ্গেল ফেইজ স্মার্ট পেমেন্ট মিটার।’
মন্ত্রী সভার বৈঠকের শুরুতেই ‘ওয়ার্ল্ড স্কিলস বাংলাদেশ’-এর লোগো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দক্ষতা বা স্কিলস বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় গঠিত হচ্ছে ন্যাশনাল স্কিলস ডেভোলাপমেন্ট অথারিটি বা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড স্কিলস কম্পিটিশনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশের নিজস্ব লোগো আছে। এর আগে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ওয়ার্ল্ড স্কিলস বাংলাদেশের লোগোটি অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম আব্দুস সামাদের মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাবও গ্রহণ করে মন্ত্রীসভা।