বাজিস-২ : নাটোর শহর উন্নয়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে একশ’ ৬৬ কোটি টাকার ৬টি প্রকল্প

165

বাজিস-২
নাটোর-উন্নয়ন
নাটোর শহর উন্নয়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে একশ’ ৬৬ কোটি টাকার ৬টি প্রকল্প
নাটোর, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : নাটোর শহর কেন্দ্রীক উন্নয়ন বলয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে মোট একশ’ ৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি প্রকল্প। এরমধ্যে রয়েছে শহরের প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ, একশ’ শয্যার সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় রুপান্তর এবং টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, শেখ কামাল আইটি এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, অত্যাধুনিক মিলনায়তন কাম মাল্টিপারপাস হল ও জিমনেশিয়াম নির্মাণ।
৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শহরের বনবেলঘরিয়া বাইপাস থেকে শহর হয়ে বড়হরিশপুর বাইপাস পর্যন্ত ৫.৮৬ কিলোমিটার সড়কের মাঝখানে চার ফুট ডিভাইডারসহ উভয় দিকে ১৮ ফুট করে প্রশস্ত সড়ক এবং সড়কের উভয় পাশে চার ফুট করে ড্রেন কাম ফুটপাত।
সড়ক প্রশস্তকরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দ্রুততার সাথে কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রতিদিন রাস্তার দুইটি স্থানে প্রায় তিনশ’ জনবল কাজ করছে। ইতোমধ্যে ড্রেন কাম ফুটপাতের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যুগপৎভাবে চলছে রাস্তার প্রশস্তকৃত অংশে বালি-খোয়া ভরাটের কাজ। নাটোর প্রেসক্লাব এলাকাসহ রাস্তার কিছু অংশ চারলেন পর্যন্ত প্রশস্ত হবে বলে সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই সব কাজ শেষ করা যাবে এমন সমন্বিত পরিকল্পনায় দ্রুততার সাথে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান প্রকল্পের ঠিকাদার মীর আমিরুল ইসলাম জাহান।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক জানান, বস্তবায়নাধীন প্রকল্প এলাকার কয়েকটি স্থানে রাস্তা নির্মাণে জায়গা থাকলেও ডিভাইডার ও ড্রেন নির্মাণের জন্যে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এজন্যে অতিরিক্ত ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং এক্ষেত্রে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়বে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন ৪টি টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নাটোরের বড় হরিশপুর বাইপাস এলাকার রামাইগাছিতে তিন একর জমির উপর সর্বমোট ৪৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নাটোর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্র্যায়ে ভূমি উন্নয়নের মাধ্যমে ছয় তলা ভিত বিশিষ্ট তিন তলা প্রশাসনিক, একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন,১৫৬ শয্যার ছয় তলা বালক হোস্টেল, চার তলার ৮০ শয্যার বালিকা হোস্টেলের দ্বিতল ভবন, ৪০ শয্যার দ্বিতল ডরমিটরি ভবন, দ্বিতল জুট শেড,সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীন রাস্তা, ড্রেন, গেট, সোলার প্যানেল, ভূ-গর্ভস্থ জলাধার ও বৈদ্যুতিক সাব ষ্টেশন নির্মান কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
প্রকল্প কাজের দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই একর জমি অধিগ্রহণ শেষে একটি করে কটন এন্ড স্পিনিং শেড, ডাইং শেড এবং উইভিং এন্ড নিটিং শেডের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ।
এদিকে টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। চার বছর মেয়াদী এসএসসি পাশের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে ১২০ আসনে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে
স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচীর আওতায় ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক অপারেশন প্লানের অধীনে নাটোর সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ কার্যক্রম গত বছর শুরু হয়েছে। মোট ৩৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০তলা ফাউন্ডেশনে ছয়তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পাইল শেষে ফাউন্ডেশন কাজ চলছে। প্রকল্প কাজের মধ্যে রয়েছে আউটডোর, ইনডোর, জরুরী বিভাগ, প্যাথলজি, চারটি অপারেশন থিয়েটার, লিফট, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও ডিপ টিউবয়েল। ইতোমধ্যে ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং জুন ২০২২ এর মধ্যে সব কাজ শেষ হবে।
নাটোরের পুরনো জেলখানা ভবন এলাকায় আড়াই একর জমির উপরে ছয় কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখন চলছে রঙের কাজ। দুইটি অংশে বিভক্ত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পুরনো জেলখানা ভবন সংস্কার করে প্রশিক্ষণ সেন্টার তৈরী ও ছয়তলা ফাউন্ডেশনের উপর নতুন দ্বিতল ভবনে ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ।
সেন্টারটিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন এন্ড তেভেলপমেন্ট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এন্ড নেটওয়ার্কিং ট্রাবলশ্যুট এবং কন্ডাক্টিং ই- কমার্স ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কার্যক্রম চালু করার পর ২১টি ব্যাচে মোট ৪৮০ জন শিক্ষিত তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। বর্তমানে সেন্টারটিতে ইনকিউবেশন কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত সময়ে হাসপাতাল, টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট ও শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের গুনগত মানের কাজ সম্পন্ন করতে বিভাগীয় তৎপরতা অব্যাহত আছে।
প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অনিমা চৌধুরী অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল’ নির্মাণ কাজ এখন শেষের পথে। শহরের আলাইপুর এলাকায় মিলনায়তন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে নাটোর জেলা পরিষদ।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, মে ২০১৫ থেকে শুরু হওয়া ১ হাজার ৪৪ আসন বিশিষ্ট মিলনায়তনের নিচতলায় ৬৬০টি এবং দো’তলায় ৩৮৪টি আসন থাকবে। এছাড়া দো’তলায় ২টি সেমিনার কক্ষ থাকছে। সেমিনার কক্ষ ২টি একীভূত করে কমিউনিটি সেন্টার হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তন কাম হলে আধুনিক শব্দ ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটকের উপযোগী মঞ্চ, লাইটিং, গ্রীণ রুম, রিহার্সেল রুম, বৈদ্যুতিক রুম ছাড়াও উভয় তলাতে নারী-পুরুষদের পৃথক টয়লেট ব্যবস্থা থাকছে।
নাটোর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী শাহ্ মোহাম্মদ আসিফ জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় সারাদেশে ৬১টি জেলা শহরে অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় নাটোর জেলায় প্রথম নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়া মিলনায়তন কাম হলটি চলতি বছরের শেষার্ধে ব্যবহার করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোর জেলা জিমনেশিয়াম নির্মাণ কাজ এখন শেষের পথে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ শহরের পটুয়াপাড়া এলাকায় শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন স্থানে এই জিমনেশিয়াম নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।
নাটোর জেলা জিমনেশিয়ান নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন প্রকল্পের প্রকল্প প্রকৌশলী মীর্জা হেদায়েতুল হক জানান, জিমনেশিয়ামের অভ্যন্তরে তিনটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট থাকছে। এছাড়া ওয়াশরুমসহ কার্যালয়, একটি জিম ও খেলোয়ারদের জন্যে দুইটি ড্রেসিং রুম এবং দর্শকদের জন্যে চারটি ওয়াশরুম থাকছে। বাইরে থাকছে সংযোগ সড়ক। জিমনেশিয়ামের ধারণক্ষমতা ৪৫০ জন দর্শক।
প্রকল্প প্রকৌশলী আরো জানান, সকল নির্মাণ কাজ শেষে বর্তমানে ফ্লোরে রঙের কাজ চলছে। এরপর আসন বিন্যাস কাজ শেষ হলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিকট জিমনেশিয়ামটি হস্তান্তর করা হবে।
নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল বাসসকে বলেন, ঐতিহ্যের নাটোরকে সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন কাজ অব্যাহত থাকবে।
বাসস/সংবাদদাতা/১৪১০/মরপা