আলোর জন্য জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরতা করে না বরগুনার বেশিরভাগ মানুষ

190

বরগুনা, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলার ৯১ শতাংশ মানুষ আলোর জন্য বিদ্যুত বা বিকল্প সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করছেন। দেশের অন্যান্য প্রত্যন্ত জেলাগুলোতে ৪৪ ভাগ মানুষ আলোর জন্য এখনও কেরোসিনের উপর নির্ভরশীল হলেও বরগুনায় এধরনের মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ।
সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের উদ্যোগে চট্টগ্রাম, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের আটটি জেলায় জরিপ চালানো হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় এবং বরিশাল বিভাগের ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনার গ্রাম এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয় নমুনা। এ গবেষণায় বলা হয়েছে এসব এলাকার ৪৪ শতাংশ মানুষ এখনও আলোর জন্য কেরোসিনের উপর নির্ভরশীল। খাগড়াছড়িতে ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং বান্দরবানে ৮৫ শতাংশ পরিবার এখনও কেরোসিন ব্যবহার করে। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামে ৩৭ শতাংশ, লালমনিরহাটে ২৬ শতাংশ এবং পঞ্চগড়ের ৩৬ শতাংশ খানা জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার করছে। অন্যদিকে বরিশালের ভোলায় ১৫ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ১৬ শতাংশ এবং বরগুনাতে ৯ শতাংশ মানুষ এ জ্বালানি ব্যবহার করছে। গবেষনায় আরও বলা হয়েছে, সরকার কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৭৩ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকার নির্ধারণ করেছে। কেরোসিনের দাম এক টাকা বাড়লে আলোর জন্য জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল শিক্ষার্থীদের ৩ মিনিট সময় নষ্ট হয়। দাম দুই টাকা বাড়লে ৬ মিনিট লেখাপড়া সময় নষ্ট হয়।
বরগুনা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। যে সব এলাকায় এখনও বিদ্যুত পৌঁছায়নি, সেসব এলাকায় মানুষ সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করছেন। বরগুনার বিভিন্ন গ্রাম ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাগুলোর স্থানীয় লোকজন ব্যাপকহারে সৌরশক্তি ব্যবহার করে আলোর চাহিদা মেটাচ্ছেন। শুধু গ্রামই নয় জেলার ছয়টি উপজেলা শহরে বিদ্যুতের পাশাপাশি মানুষের বাসা-বাড়ি কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সৌর শক্তির ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। কৃষি জমিতে সৌর সেচ পদ্ধতি চালু হয়েছে ৮ বছর আগেই। এখন সড়কবাতি জ্বালানোর কাজেও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাতে বাতি জ্বালানোসহ বৈদ্যুতিক পাখা (ছোট ডিসি ফ্যান) ও টেলিভিশন চালানোর মতো সুবিধা পাওয়ায় সৌরশক্তি এ অঞ্চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাছাড়া যেসকল এলাকায় বিদ্যুত পৌঁছাতে এখনও সময় সাপেক্ষ সেই এলাকাগুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সকলেই সৌর শক্তি ব্যবহার করা শুরু করেছেন। শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলাকালীন আলোর চাহিদা মেটাতেও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপক হারে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী দপ্তরগুলোর মতো জরুরী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুতের পাশাপাশি সৌরশক্তির ব্যবহার বেশ পুরাতন। এ অঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খোদ পল্লী বিদ্যুতের অফিসগুলোতেও সৌর শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলার ফেরীঘাটগুলোর মতো গুরুত্বপূনর্ণ স্থানে সৌর শক্তির সড়কবাতি অন্ধকার দূর করছে। সৌরশক্তির ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন পপকর্ন বিক্রেতারা। পপকর্ন বিক্রয় ভ্যানে সৌর প্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে মোটর চালনা করা হচ্ছে। স্থানীয় জেলে নৌকা বা খেয়াঘাটের নৌকা ও ট্রলারেও সৌর প্যানেল দেখা যায় হামেশাই। সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে বরগুনার কৃষকরা চাষ করছেন শত শত একর জমি। সূর্যালোকের সাহায্যে ফসলী জমিতে এই সেচ ব্যবস্থা কৃষকদের জ্বালানী তেল বা বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতার হাত থেকে বাঁচিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ২০১০ সাল থেকে বরগুনায় ৬ টি গ্রামে ৬টি সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম ৪০ একর করে জমিতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে।
আমতলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার কর্মকার বলেন, সৌর শক্তির ব্যবহার বিদুতের বাড়তি চাহিদা ও জ্বালানি তেলের চাহিদা থেকে আমাদের মুক্তি দিচ্ছে।
পটুয়াখালীর পল্লী বিদ্যুত সমিতির প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানিয়েছেন, সরকারী নির্দেশনা মতে ২০১৮ সালের মধ্যে বরগুনা জেলার প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হবে।
‘এখন সাগরপাড়ের মানুষও কেরোসিনের কুপি বাদ দিয়ে রাতে (সৌর) বিদ্যুতর আলোয় কাজ করছে। বিনোদন ও শিক্ষার জন্য টেলিভিশন দেখছে। দেশের প্রতিটি এলাকায় ডিজিটাল সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দ্রুত উপকূলীয় এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করছে। এভাবেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’Ñ এ কথা জানালেন, বরগুনা ১ আসনের সাবেক সাংসদ ও বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন।