বাজিস-৬ : উপকূলের জেলেরা আধুনিক পদ্ধতি চান

142

বাজিস-৬
উপকূল-পদ্ধতি
উপকূলের জেলেরা আধুনিক পদ্ধতি চান
বরগুনা, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : মৌসুমের শেষ সময়েও গভীর সমুদ্রগামী জেলেদের জালে দেখা মিলছে না ইলিশের। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব, ঘন ঘন নি¤œচাপ, উত্তাল ঢেউ, তীব্র সমুদ্র স্রোতসহ মিষ্টি পানির প্রবাহ না থাকা, নানা প্রাকৃতিক বৈরিতায় ভরা মৌসুমেও আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে বরগুনা ও পটুয়াখালীর বিস্তীর্ন উপকূলের গভীর সমুদ্রগামী প্রায় ৪২ হাজার ইলিশ শিকারী জেলে। তবে প্রতিনিয়িত ভাগ্য ও প্রকৃতিকে দোষারোপ করা জেলেসহ সংশ্লিষ্টরা এখন বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাধান খোঁজা শুরু করছেন।
পটুয়াখালীর আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্রগামী জেলেরা এখনো মুলতঃ সনাতন পদ্বতিতে দিক ও স্থান নির্ণয় করে সাগরে মাছ শিকার করে থাকে। গভীর সাগরের কোন স্থানে একবার মাছের দেখা পেলেও পুরনায় সেখানে তার দিক চিনে ফিরে যেতে পারে না। অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরে পানির উচ্চতা এবং স্রোতের তীব্রতা বৃদ্বি পেয়েছে। এই স্রোতের তোড়ে জেলেরা অনুমানই করতে পারছে না তারা কতটুকু অভ্যন্তরে কিংবা কোথায় রয়েছেন। এটা যদি আধুনিক ‘জিপিআরএস’ দ্বারা সনাক্ত করা হয়, তবে পুনরায় সেখানে গিয়ে বা মাছের উৎসস্থলে গিয়ে তারা মাছ শিকার করতে পারবেন। তাছাড়া তথ্য প্রবাহ, জাল ফেলা, গুটানো, কিংবা প্রক্রিয়াজাতকরণ সব ক্ষেত্রেই সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করায় দেশীয় জেলেরা প্রতিবেশী দেশের জেলেদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন।
বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আ. মন্নান মাঝি জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের জেলেদের আধুনিক সুবিধা বলতে কাঠের তৈরী ছোট ট্রলারে একটি ইঞ্জিন মাত্র। এমনকি অধিকাংশ ট্রলারে জীবন বাঁচানোর মতো পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট বা বয়াও নেই।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানিয়েছেন, সাগরে কিছুদূর গেলেই রেডিও সিগন্যাল, মোবাইলফোন সিগনাল হারিয়ে যায়। বাংলাদের উপকূল থেকে বাংলাদেশের জলসীমা মোবাইল ফোন ও রেডিও নেটওয়ার্ক এর আওতায় আনা গেলে স্থলভাগে থেকে জেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা যেত। জিপিআরএস সিস্টেম ব্যবহার করতে পারলে এ মৎস্য সেক্টরে রাতারাতি বিপ্লব ঘটে যাবে।
আলাপকালে জেলেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় ট্রলারসমুহ ঢুকে প্রচুর মাছ ধরে দ্রুত সটকে পড়ে। গভীর সাগরে ভারতীয় রেডিও ও মোবাইলফোন নেটওয়ার্ক রয়েছে। ভাষা না বোঝার কারণে ওই রেডিও বাংলাদেশী জেলেদের কোন কাজে আসছে না। গভীর সমুদ্রে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা জাল টেনেও মিলেনা আশানুরূপ মাছ। খালি হাতেই ঘাটে ফেরেন তারা।
পটুয়াখালী মৎস্য বিভাগের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম জানান, একবারেই যে ইলিশ ধরা পড়ছে না, তা নয়। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়, মিঠা পানি প্রবাহ কম থাকায় পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে না।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট এম রুহুল আমিন জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর ইলিশসহ অন্যান্য মাছ খুব কম। গত এক সপ্তাহে ১৭৩ টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে। গত এক মাসে মাত্র ৫৪৬ মে.টন ইলিশ বেচকেনা হয়েছে। গত বছর এক সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১০১৯ মে.টন।
বরগুনার সাবেক সাংসদ, বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জােিয়ছেন, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিসহ নানা টিভি চ্যানেলে সাগর-নদীতে মৎস্য শিকারের আধুনিক পদ্ধতি দেখে এখানকার জেলেরাও সচেতন হচ্ছে। জেলেদের মধ্যে থেকেই আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের তাগিদ পাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা। এটা খুবই ইতিবাচক। সরকারি ও বেসরকারিভাবে আধুনিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হলে উপকূলের মৎস্য শিকার বৃহৎ শিল্পে পরিণত হবে।
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১৬৫৫/মরপা