বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : বিএনপি দেশের বিদ্যুৎ খাতকে যেভাবে পিছিয়ে দেয় তা নজিরবিহীন : প্রধানমন্ত্রী

139

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বিদ্যুৎ
বিএনপি দেশের বিদ্যুৎ খাতকে যেভাবে পিছিয়ে দেয় তা নজিরবিহীন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। প্রতিমাসে ৩ থেকে ৫ লাখ গ্রাহক সংযোগের ফলে এখন মোট গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটিতে পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, তাঁর সরকারের সময়ে মোট ২৪ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে ও ১০১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সরকার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণেও ছিলাম সচেষ্ট। বিগত সাড়ে নয় বছরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ৮ হাজার কিলোমিটার হতে ১১ হাজার ১২২ সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করেছি। বিতরণ লাইন ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার হতে ৪ লাখ ৫৭ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।
২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ যা বিগত সাড়ে ৯ বছরে ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, বলেন তিনি।
তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার ফলে দেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ৪৬৪ কিলোওয়াট-ঘণ্টায় উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেম লস ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। বিগত সাড়ে নয় বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার নতুন সেচ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ৫৩ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করার মাধ্যমে প্রায় ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রায় ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিডভিত্তিক ২টি সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।
বর্তমানে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক জ্বালানির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে পূরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নতুন ৪টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। গ্যাসের গড় উৎপাদন দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। ৮৬২ কিলোমিটার নতুন গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
২০০৯-২০১৮ সময়ে ৩৩টি নতুন গ্যাস স্ট্রাকচার চিহ্নিতকরণ, ১৪টি অনুসন্ধান কূপ ও ৫৭টি উন্নয়ন কূপ খনন এবং ৪৪টি কূপের ওয়ার্কওভার কাজ তাঁর সরকার সম্পাদন করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে মোট ১০৮টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল কয়লা খনি বড়পুকুরিয়া থেকে বর্তমানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি লংওয়াল টপ কোল কেভিং (এলটিসিসি) পদ্ধতিতে গড়ে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার হতে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন উন্নতমানের বিটুমিনাস কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে।
দেশে গ্যাসের মজুদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গৃহস্থালি জ্বালানির চাহিদা পূরণে এলপিজির উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপনের অনুমতি প্রদান করায় এলপিজি সিলিন্ডারের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বিদ্যুৎ খাতে প্রি-প্রেইড মিটার স্থাপন এবং অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদান করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পায়রা বন্দর এবং মহেশখালিতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের ব্লু ইকোনমি প্রসারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, জাতিসংঘের সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল এবং আন্তর্জাতিক সালিশী আদালতের রায়ের ফলে বাংলাদেশের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকা অর্জিত হয়েছে। সমুদ্রের সকল সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে ব্লু-ইকনোমি সেল গঠন, অফশোর মডেল পিএসসি-২০১৪ এবং অনশোর মডেল পিএসসি-২০১৪ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
ভাষণের শুরুতেই দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিকাশে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বিদেশী তেল কোম্পানির নিকট হতে ৫টি গ্যাস ফিল্ড ক্রয়ের মাধ্যমে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কিন্তু ঘৃণ্য কুচক্রীদের হাতে জাতির পিতা শাহাদাৎবরণ করায় তাঁর এই স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর থেকে তাঁর একটাই লক্ষ্য-কিভাবে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা যায়।
তাঁর সরকারের সময়ে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ শুরু করেছি।
শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন-‘২০২১ সালে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৫৫৪/আরজি