বাসস দেশ-৫ : একুশে আগস্ট মামলায় আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ : আইনি পয়েন্টে রাষ্ট্রপক্ষে শুরু

159

বাসস দেশ-৫
২১ আগস্ট-মামলা-বিচার
একুশে আগস্ট মামলায় আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ : আইনি পয়েন্টে রাষ্ট্রপক্ষে শুরু
ঢাকা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন আজ শেষ হয়েছে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১০, ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগষ্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। টানা ৮৯ কার্যদিবসে মামলায় ৪৫ আসামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে।
আসামীপক্ষ আজ যুক্তিতর্ক শেষ করায় আদালত ও প্রসিকিউশন ধন্যবাদ জানায়। আজ আসামী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে তার আইনজীবী এসএম শাহজাহান দ্বিতীয় দিনে আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক শেষ করেন।
এর আগে বাবরের পক্ষে আইনজীবী নজরুল ইসলাম সাক্ষ্য তথ্য-প্রমানের আলোকে আট কার্যদিবস যুক্তিতর্ক পেশ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল আজ আইনি পয়েণ্টে যুক্তিতর্ক পেশ শুরু করেন। তিনি তার শুনানিতে, ২১ আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় পুনঃতদন্ত কিভাবে করা যায় তার আইনি ভিত্তি তুলে ধরছেন। এ বিষয়ে তিনি উচ্চ আদালতসহ বিভিন্ন রেফারেন্স তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মামলার যে কোন স্তরে ন্যায়বিচারের স্বার্থে পুনঃতদন্ত করা যায়।
তিনি বলেন, এ মামলায় প্রথম অভিযোগপত্র দাখিলের পর আবারো তদন্ত হয়। ওই তদন্তে ঘটনার বিষয়ে ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্রের স্থান ও জড়িতদের সম্পৃক্ততার বিষয় বেড়িয়ে আসে। কাজল বলেন, ২১ আগস্ট ঘটনা ঘটানোর ব্যাপারে দুটি অভিপ্রায় স্পষ্ট-প্রথমত- আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা দ্বিতীয়ত- দেশকে আবারো পাকিস্তান বানানো। তিনি বলেন, আর্জেস গ্রেনেডের মতো যুদ্ধাস্ত্র তথা সমরাস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর এ ধরনের হামলা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মো. আবু আব্দুল্লাহ্ ভ্ুঁইয়া, এডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল. এডভোকেট ফারহানা রেজা, এডভোকেট আমিনুর রহমান, আশরাফ হোসেন তিতাস প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন
২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামীর সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামীর অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ৩ আসামী হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামীর বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক। আসামীদের মধ্যে ৪৫ জনের যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়।
প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য এডভোকেট ফারহানা রেজা বাসস’কে বলেন, মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর পলাতক ১৮ আসামীর বিষয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে তাদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। এরমধ্যে যাদের বিষয়ে আইনে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার মতো ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিল। এ আইনজীবীরা পলাতকদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আসামীরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মো.হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহামন, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গির আলম বদর, মো. খলিল, মো.ইকবাল, মাওলানা লিটন ও মুফতি আবদুল হাই।
উল্লেখ্য, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামীপক্ষে সাক্ষিদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্যদিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
বিচারের মূখোমূখি থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন- বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, এ মামলার ১১৪ দিন যুক্তিতর্ক অনুষ্টিত হয়েছে। এর মধ্যে টানা ৮৯ কার্যদিবস আসামীপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ করছে। এরআগে রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
বাসস/এএসজি/ডিএ/১৬৫০/-কেকে