নকলায় কৃষি ইকোপার্ক গড়ে উঠেছে

301

শেরপুর, ১৯ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : নকলায় গড়ে উঠেছে কৃষি ইকোপার্ক। ইকো পার্ক মানেই জীব বৈচিত্র আর পাখ-পাখালি ও গাছ-গছালি’র সমাহার। তবে একটু ব্যাতিক্রমী ইকো পার্ক গড়ে উঠেছে শেরপুরের নকলায়। প্রায় ৭ একর জমি’র উপর কেবল মাত্র ধূ ধূ ও উত্তপ্ত বালু জমিতে গড়ে উঠেছে এ ইকো পার্কটি। যেখানে কোন রকমের গাছ-গাছালি তো দুরের কথা লতা-গুল্মও জন্মাতো না সেখানে কৃষি বিভাগের বিজ্ঞানীরা নানা কৌশল আর গবেষণা করে জন্মিয়েছে আম, জাম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, বরই, আতা, তাল, ছফেদাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতি’র ফলদ এবং বিভিন্ন ওষুধী ও বনজ প্রায় শতাধিক প্রজাতি’র আড়াই হাজার বৃক্ষ।
প্রথম পর্যায় ওই বালু জমিতে কোন গাছের চারা রোপণ করলে ক’দিন পর তা মরে যেতো। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর গবেষণা করে ওই ইকোপার্কে প্রথম বিভিন্ন প্রজাতি’র গাছের চারা লাগিয়ে সফল হয় কৃষি বিভাগের বিজ্ঞানীরা। এরপর শুরু হয় ইকো পার্ক গড়ার কাজ।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, জেলার নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের উরফা কোদাল দোয়া গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি ভোগাই ও কালা গাঙ্গ নদী। ২০০৯ সালে কৃষিমন্ত্রী ভোগাই নদীর উপর রাবার ড্যাম নির্মাণ এবং নদী’র নব্যতা বৃদ্ধির জন্য নদী খননের কাজ করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় নদী খননের বালু ভোগাই ও কালা গাঙ্গের মোহনার তীরে স্তুপাকারে রেখে দেয়। পরবর্তিতে ওই বালুর স্তুপের উপর প্রায় সাড়ে তিন একর জমিতে কেবল মাত্র স্থানীয় গ্রামবাসী’র জন্য ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ করে জীব বৈচিত্র তৈরির জন্য ইকো পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
কিন্তু ওই উত্তপ্ত ও ধূ ধূ বালুর মধ্যে প্রথম কয়েক বছর কোন গাছ তো দূরের কথা কোন রকমের লতা-গুল্ম জন্মাতো না। এতে থেমে থাকেনি কৃষি বিভাগের বিজ্ঞানীরা। জামালপুরের হার্টিকালচার বিভাগ এবং বাংলাদেশ কৃষি সম্পসারণ বিভাগের সাবেক মহা পরিচালক মো. এনামূল হক ওই ইকো পার্কে গাছ জন্মানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে নানা গবেষণা করে বিশেষ কায়দায় অবশেষে প্রায় ৪ বছর পর সফল হয়। এরপর আস্তে আস্তে ২০১৪ সালে ওই ইকো পার্কে রোপণ করা হয় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতি ফলদ, ওষুধী ও বনজ প্রায় ২ হাজার ৫ শতাধিক গাছের চারা। বর্তমানে ওই ইকো পার্কের বেশ কয়েকটি গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। পাশাপাশি দেশীয় নানা প্রজাতির পাখ-পাখালি’র অভয়ারন্যও স্মৃষ্টি হয়েছে। আর ইকো পার্কের গাছ গুলোকে সতেজ ও জীবন্ত রাখতে সার্বক্ষণিক দু’জন শ্রমিক নিয়োগ করেছেন কৃষি বিভাগ।
এদিকে ছায়া ঘেরা ইকো পার্কের মনোরম পরিবেশ দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছে বিভিন্ন পেশার মানুষ-জন। ইকো পার্কের তিন পাশ দিয়ে নদী বয়ে যাওয়ায় কোদাল দোয়া বাজার থেকে নৌকা করে নদী পার হয়ে পৌছতে হয় পার্কে। স্থানীয়রা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানালেও কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী’র ইচ্ছে এখানে বাণিজ্যিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কোন স্থাপনা তৈরি না করে একেবারেই প্রকৃতির মতো ন্যাচারাল ইকো পার্ক গড়ে উঠোক এটি। যাতে জীব বৈচিত্রের এবং পাখির অভয়াশ্রমের কোন সমস্যা না হয়। তবে ভবিষ্যতে পার্কে যাতায়াতের জন্য এখানে একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন।
কৃষি বিভাগের সাবেক মহা পরিচালক এবং ওই ইকো পার্কের বৃক্ষ জন্মানোর গবেষক মো. এনামুল হক বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেও ওই বালুর মধ্যে কোন গাছ জন্মাচ্ছিল না। তাই আমরা অনেক গবেষণা করে বিশেষ কায়দায় মাটি থেকে ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি গভির করে এবং গাছের চারার পারপাশে ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি ফাঁক রেখে চারাগুলো রোপণ করার পর বালুর তাপ থেকে রক্ষা পেয়ে চারা গুলো বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায় ওই ইকো পার্কের সকল চারা সতেজ হয়ে উঠে এবং বর্তমানে বেশ বড় হয়ে উঠেছে। অনেক গাছে ফলও ধরতে শুরু করেছে। এ পদ্ধতি আমাদের কৃষি বিভাগের একটি সাফল্য হিসেবে আমি মনে করি। আশাকরি আগামি ৫ বছরের মধ্যে ইকো পার্কটি আরো সবুজ হয়ে উঠবে এবং এখানে দেশীয় নানা পাখ-পাখালি’র আবসস্থল হয়ে উঠবে। আর ফলদ বৃক্ষ থেকে এলাকাবাসী দেশীয় নানা ফল খেতে পাবে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশরাফ হোসেন জানান, কৃষি ইকোপার্কটি আরও সম্প্রসারণ এবং দেশীয় গাছপালা রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।